ভারতীয় ক্রিকেটে বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক, এখন জীবন যাপনের জন্য মাঠে গরু চড়ান, তার বর্তমান পরিস্থিতি জানলে কেঁদে ফেলবেন

সিনেমায় অনেক গল্প আমরা প্রত্যক্ষ করি কিন্তু ক্রিকেটারের করুণ কাহিনী সেভাবে আমাদের জানা নেই। একজন কিশোর সেই ছোট বয়স থেকেই তার প্রতিভার পরিচয় দিতে শুরু করে একটু একটু করে। আসলে ভালোবাসা জিনিসে অল্প সাফল্যও মানুষকে অনেক দূর পৌছে দেয়। কিন্তু প্রতিভাকে কখনও কখনও সময়ের কাছে হার মানার দৃষ্টান্ত অবার কম নেই। এমন প্রতিভা কত যে আছে এই আমাদের ১৩০ কোটির দেশে! কিন্তু সেই ছেলেটির কোনো খোঁজ আছে আজ?কৃষকের ঘরে জন্ম।

জন্মের পর থেকেই অন্ধ। তবে কোনো বাধা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কৃষক বাবার গরু চড়ানোর কাজে নামতে হলো তাকে।

তিনি ভারতীয় ক্রিকেটার বালাজি দামোর। ১৯৯৮ সালে দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।ব্যাট ও বল হাতে তার পারফর্ম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ওই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিল ভারত।

১৯৯৮-এর ব্লাইন্ড বিশ্বকাপ । ভারতীয় ব্লাইন্ড ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দলটিকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে দিলেন। নিয়ে গেলেন সেমিফাইনাল পর্যন্ত। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কেআর নারায়ানান পর্যন্ত মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন। মধ্যিখানে বয়ে গেছে অনেক জল। আজও সেই ক্রিকেটারের নামের পাশে সর্বোচ্চ উইকেট টেকার কথাটি জ্বল জ্বল করে। তার নাম বালাজি ডামোর। মনে পড়ছে এবার?
তবে বালাজি সে সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি কেআর নারায়ণের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের পরে বালাজি ভেবেছিলেন একটা চাকরিও জুটে যাবে তার। ভাগ্য তার এতটাই খারাপ যে তাও জোটেনি। অগত্যা আর কী! গরু চরানোর কাজেই নেমে পড়লেন তিনি।

কিন্তু সময় অবিচার করেছে বালাজির ওপর। অবিচার করেছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনও। সেই ১৯৯৮ সালে ব্লাইন্ড ক্রিকেট টিমের নজির সৃষ্টিকারী এই প্রজন্ম চেনে না। কিন্তু কেমন আছে বালাজি? কোথায় আছেন? এখন বালাজির বয়স ৩৮। ক্ষীণকায় শরীর, তবুও ক্রিকেটিও বিভঙ্গি। এক কৃষক পরিবারে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকেন। চাষ কাজ ও গরু চরানো তার বর্তমান পেশা। এই ভাবেই সেই বিশ্বকাপ হিরো স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দিনগুজরান করছেন গুজরাটের একটি গ্রামে।

সময় বয়ে গেছে অনেক। এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার নিজের সেরা খেলাটির কথা আজও ভুলতে পারেন না। সেই সময় বালাজি ডামোর প্রত্যাশা করেছিলেন, হয়তো তাঁকে একটি চাকরি দেবে সরকার। ভাগ্য ফিরবে। কিন্তু তাতে জল। বালাজির ভাগ্য ফেরেনি। তাতে কি? আজ জীবনের নতুন খেলায় সম্মানের সঙ্গে বেচে আছেন। দারিদ্র হয়তো প্রখর! আত্মসম্মান বালাজির আরও বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button