ট্রেনে কাটা পড়েছিলো শরীর, মনের জোর আর কঠোর পরিশ্রমে আজ সফল এই যুবক

মানুষ পারেনা এমন কোন কাজ নেই। দেব তেমনই একজন যুবক যার কাছে অসাধ্য সাধন হবে না এমন কোন কাজ নেই। এই যুবকের জন্ম হয়েছে বিহারের বেগুসারাই জেলাতে। ছোট ছোট তিনটি বাচ্চাকে রেখে দেবের বাবা মারা যান এবং তখন অতল জলে তলিয়ে যায় তাদের জীবন। দেবের মাত্র 6 মাস বছর বয়স, তখন তার বাবা মারা যান। বাবা চিকিৎসায় মায়ের সমস্ত জমানো টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। এরপর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সন্তানদের মানুষ করতে শুরু করেন তার মা। দিনরাত পরিশ্রম করে সন্তানদের পেটে খাবার দিতেন তিনি।
পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য একমাত্র পাঁচ বছর থেকে কাজ করা শুরু করে। মাকে সাহায্য করা থেকে শুরু করে পশুপালন সবই করেছিলেন সেই সময় তিনি। পেটের টানে অষ্টম শ্রেণীর অবধি পড়াশুনা করি পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। 2015 সালের হায়দ্রাবাদে এসেছিল দেব। তবে হায়দ্রাবাদ গমন যে তার জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সে। রেললাইন থেকে ট্রেন তখন মাত্র দশ হাত দূরে, ঠিক সেই সময় রেললাইনের ওপর পড়ে যায় দেব।
কোনরকমে উঠতে চেষ্টা করলে উঠতে সক্ষম হয়নি সে। ট্রেন চলে যায় তার কোমরের উপর দিয়ে। একটি ট্রেন কোমরের উপর দিয়ে চলে যেতে না যেতেই আরেকটি ট্রেন চলে যায়। প্রায় তিন ঘন্টা কিভাবে পড়েছিলেন তিনি প্ল্যাটফর্ম এর উপরে। অবশেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, কোনভাবে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় সেদিন তিনি বেঁচে যান এবং সেই থেকে শুরু হয়েছিল তার অন্য এক জীবন। পরবর্তী জীবন শুরু হয়েছিল কুরলা স্টেশন থেকে। দিনের-পর-দিন স্টেশনে ফুটপাতে কাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বহুবার চাকরির জন্য চেষ্টা করলেও থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যান তার থেকে। বহু সেলিব্রিটি বাড়ির সামনে বহুদিন দাঁড়িয়েছিলেন একটিমাত্র কাজের জন্য। অবশেষে জ্যাকি শ্রফ এর কাছ থেকে একটি খাম পেয়েছিলেন যেখানে 5000 টাকা ছিল।
এই ভাবেই চলছিল দিন। হঠাৎ করে একদিন তার দেখা হয় ফারহান খান আলির সাথে। তিনি একজন অলংকার ডিজাইনার ছিলেন। যুবকের সামনে ভগবানের মতো এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দেবের কষ্ট থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে তুলে দেন 10 হাজার টাকা এবং কিছু খাবার এবং অন্যান্য খরচ। দেবকে কিনে দেন একটি ট্রাই সাইকেল। এরপর মনকে শক্ত করে প্রত্যেকদিন নিজের শরীরকে যত্ন নেওয়া শুরু করলেন দেব। আস্তে আস্তে শুরু করলেন ব্যায়াম করা।
ইন্ডিয়ান গট ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতায় তিনি অডিশন দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় নিজের দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এভাবে আস্তে আস্তে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জীবনে কোনো বাধা বিপত্তির সামনে ভেঙে না পড়ে নতুন করে বাঁচার নামই হল জীবন।