গঙ্গার নীচে মেট্রো সুরঙ্গ কিভাবে হলো? ভিডিওটি দেখলে চমকে যাবেন

গঙ্গার প্রায় ৩০ ফুট নীচ দিয়ে ৫২০ মিটার (২.৭কিমি) পথ অতিক্রম করে হাওড়া থেকে মহাকরণ আসবে মেট্রো রেল। আড়াই কিলোমিটারের কিছু বেশি এই পথ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে এপ্রিল থেকে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গার নীচের সুড়ঙ্গ দিয়ে চলাচল করবে মেট্রো রেল। গঙ্গার নীচ দিয়ে যে পথ ধরে মেট্রোর সুড়ঙ্গ যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে, সেখানে গঙ্গার সর্বোচ্চ গভীরতা ১৩ মিটার। গঙ্গার তলদেশেরও ১৭ মিটার নীচে দিয়ে যাবে সুড়ঙ্গ।

ভূগর্ভের প্রায় ৩০ মিটার গভীরে একই সঙ্গে জল ও মাটির বিপুল চাপ ধরে রাখতে গেলে যে শক্তিশালী সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হবে।কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (কেএমআরসি) অন্যতম প্রধান প্রযুক্তিবিদ বিশ্বনাথ দেওয়ানজির কথায়, ‘হাওড়ায় তৈরি স্টেশনটি মাটির ২৭ মিটার নীচে থাকবে। হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রোর লাইন ক্রমশ মাটির গভীরে ঢুকে যাবে। হাওড়া ছাড়ার পরই টানেল চলে যাবে গঙ্গার গভীরে।’

হাওড়া ময়দান থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্রস্তুতি। প্রায় ৮৪ মিটার সুড়ঙ্গ কাটার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। সুড়ঙ্গ কাটার সঙ্গে সঙ্গে চলছে ২৭.৫ সেন্টিমিটার পুরু লাইনার দেওয়ার কাজ। বিশেষ ভাবে তৈরি কংক্রিটের এই লাইনারের মধ্যে দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। চলছে মেট্রো চলাচলের লাইন পাতার কাজও। বিশ্বনাথবাবু আরও জানিয়েছেন, ‘যে টিউবের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চলবে সেই টিউব প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া। ফ্লাই অ্যাশ ও মাইক্রো সিলিকা দিয়ে তৈরি এই সুড়ঙ্গে জল নিরোধক ব্যবস্থা পুরোপুরি সুরক্ষিত। এই ভাবেই সুড়ঙ্গ তৈরি করে ইংলিশ চ্যানেলের তলা দিয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে।’

২০০৮ খ্রিস্টাব্দে মট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস ও ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হলেও নানা বাধার ফলে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সুভাষ সরোবরের কাছে। এটি ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো টানেল বা সুড়ঙ্গের পূর্ব প্রান্ত। কিন্তু পশ্চিম প্রান্ত অর্থাত্‍ হাওড়ায় সুড়ঙ্গ নির্মাণ পুরোদমে শুরু হয় আরো চার বছর পর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। বর্তমানে ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এই অংশে এখন চলছে লাইন পাতার কাজ। মেট্রোর সুড়ঙ্গের দেওয়াল তৈরির ‘জ্যা’-এর মতো জমানো কংক্রিট ব্লকগুলো একটা একটা করে মাটির তলায় ঢোকানোর কাজ দ্রুতগতিতে চলেছে।

কেএমসিআরএলের কর্তাদের বক্তব্য, নদীর নীচে এত বড় সুড়ঙ্গ কেটে মেট্রোর কাজ আগে হয়নি। তাঁদের ধারণা, গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ হলে ২০১৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে মেট্রো মহাকরণ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। তার পরে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত বাকি কাজটা ২০১৯-এর নির্ধারিত সময়েয়র মধ্যেই শেষ করা যাবে।

গঙ্গার নিচে যে দুটি সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে, তার একটির নাম ‘রচনা’, অন্যটির নাম ‘প্রেরণা’। দুটি সুড়ঙ্গের মধ্যে রচনার কাজ আগে শেষ হয়েছে। এক-একটি সুড়ঙ্গ ৫২০ মিটার লম্বা। নিরাপত্তার জন্য প্রতি ২৫০ মিটার অন্তর থাকবে অন্য টানেলে যাওয়ার ক্রস প্যাসেজ থাকছে। ট্র্যাকের পাশে থাকবে ওয়াক ওয়ে। স্টেশনে আটকে পড়লে দু’মিনিটের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম খালি করার ব্যবস্থাও থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button