IIT কমপ্লিট করার পর লাখ টাকার প্যাকেজ ছেড়ে গ্রামে এসে কৃষিকাজের ট্রেনিং দিয়ে আজ 35000 মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন এই যুবক

আমাদের জীবনের লক্ষ্য ভালো চাকরি এবং ভালো উপার্জন। আর সেই উপার্জিত টাকার মধ্যে দিয়ে জীবনের সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিলাসিতা পূরণ করা, কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে আমাদেরই মাঝে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা নিজেদের জন্য না ভেবে পরের জন্য ভাবেন। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়ত তাদের জন্যই পৃথিবী আজও চলছে।
এমনই একজন ব্যক্তি হলেন বিশাল সিং, যিনি বেনারসের একজন বাসিন্দা যিনি আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি করে নিজের কথা না ভেবে, তিনি ভেবেছিলেন দরিদ্র গ্রামবাসী ও আদিবাসীদের কথা। তাদের জীবনযাত্রা কে কি করে উন্নত করা যায়, সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। বিশাল একজন সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে, তাঁর দাদা ও বাবা সবাই কৃষক ছিলেন । তাঁদের কৃষিকাজে ছিল একমাত্র জীবিকা, উপার্জনের পথ। কিন্তু বিশাল পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তার বাবাও চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করুক, তাই তার ছেলের পড়াশুনার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি তিনি রাখেননি।
বিশালের স্বপ্ন ছিল আইআইটি থেকে পড়াশোনা করার। দু-দুবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হতে পারেননি। তাই তখন বিশাল সময় নষ্ট করেননি, মনে করেছিলেন আইআইটি ছাড়া অন্য কোন কলেজে কৃষি প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করবেন, তাই তিনি ভর্তি হয়ে যান কলেজে।অবশ্য তিনি গ্রাজুয়েশন পাস করার পর মাস্টার্স করেছিলেন আইআইটি থেকেই। যে কারণে তিনি টেটের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন গ্রাজুয়েশনের প্রথম বছর থেকেই। কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি গেট পরীক্ষা সফল হয়েছিলেন এবং যথেষ্ট ভালো রেজাল্টও করেছিলেন এবং খড়গপুর আইআইটি তে ভর্তি হয়েছিলেন।
সেই সময় বিশাল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পড়াশোনা করার সময় তিনি বোঝেন কৃষকরা যদি সঠিক নির্দেশনা পায়, তারাও চাষ বাস থেকে যথেষ্ট ভাল টাকা উপার্জন করতে পারেন, তাই তিনি খড়্গপুরের আশেপাশে বিভিন্ন আদিবাসীদের সাথে সময় কাটাতেন। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে তিনি চাকরি করার পরিবর্তে সিদ্ধান্ত নেন দরিদ্র কৃষকদের সাহায্য করবেন।
২০১৪ সালে তিনি উড়িষ্যার একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি আদিবাসীদের সাহায্য করার অনেক সুযোগও পেয়েছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে এনএসডিসি প্রকল্পে পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিকে স্মার্ট গ্রামে রূপান্তর করার একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল, যার ফলে বেশীরভাগ সময় কাটাতেন তিনি আদিবাসীদের সাথেই। তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন পুকুর খনন করা, সোলার সিস্টেম স্থাপন করার, গোবর গ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা ইত্যাদি।
বিশাল তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে দেখতে পেলেন যে, আস্তে আস্তে আদিবাসীরা প্রচুর উপার্জন করতে শুরু করেছেন কৃষিকাজ থেকে। তাই তিনি ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তাঁর দুই বন্ধুর সাহায্যে তাঁরা গ্রাম সমৃদ্ধি নামে একটি ট্রাস্ট স্থাপন করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন গ্রামকে স্মার্ট গ্রামে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেন। যা আজ প্রায় ৩৫ হাজার কৃষকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন।
তারা তাদের জীবন উন্নত করেছেন বর্তমানে ৩৩ জন তাদের সাথে কাজ করেন ৪০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিযুক্ত আছে। যে সমস্ত আদিবাসীদের জীবন শুধুমাত্র শিকার এর উপর নির্ভরশীল ছিল, জঙ্গলের সারাদিন ঘুরে বেড়াতো, দুবেলা ঠিকমতো খেতে পেত না, তারাই আজ পুকুর তৈরি করছেন মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, নারকেল প্রসেসিং শিখেছেন। অপরদিকে শুধুমাত্র পুরুষ নয় নারী ও মেয়েরাও চাকরি করছেন। এই সমস্ত পরিবারগুলো এখন বছরের দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা আয় করছেন। এমনকি তাদের সন্তানরাও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আশা করা যায় তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।