অনাথ আশ্রম থেকে যে ভাবে কঠিন লড়াই সংগ্রাম করে আজ তিনি IAS অফিসার

দারিদ্রতা কোন অভিশাপ নয়, তাই আমাদের প্রথম মনে রাখা দরকার ধনী-গরীব মিলিয়েই মানুষ, কিন্তু ট্যালেন্ট ও প্রতিভা ধনী-গরীব দেখে হয় না। আমাদের দেশে ট্যালেন্ট এর অভাব নেই, তেমনই এক প্রতিভা হল মোহাম্মদ আলী শিহাব।

যিনি কেরালা মালাপ্পুরাম জেলার এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, দারিদ্র্যের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার সাথে সুপারি ও বাঁশের ঝুড়ি বিক্রি করতেন। এভাবেই তাদের সংসার চলতো, তবে সে টুকুও হারিয়ে গেছিল যেদিন শিহাবের বাবা মারা যান। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে অকালে চলে যেতে হয় তাঁকে। পাঁচ সন্তানের খাওয়ানোর দায়িত্ব পড়ে তার মায়ের কাঁধে, কিন্তু মা তেমন শিক্ষিত না হওয়ায় কোনো কাজই পাননি। যার ফলে তিনি তার সন্তানকে রেখেছিলেন অনাথ আশ্রমে।

এই ভেবেই রেখেছিলেন যাতে সন্তান দুবেলা খেতে পায়, যেটি তার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনাথালয় থাকাকালীন পড়াশোনার দিকে মনোযোগ হবে, এইভাবে তার দশ বছর এতিমখানা কাটে, তিনি পড়াশোনা যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন। যদিও অনাথ আশ্রম সাধারণ বিদ্যালয়ের মত অত ভালো নিখুঁত না হলেও সেই মুহূর্তে শিহাবের জীবনে অনাথ আশ্রমই ছিল স্বর্গ। যেটুকু তিনি শৃঙ্খলা বোধ শিখেছিলেন এই অনাথালয় থেকেই।যা তার জীবনকে সুসংহত করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

যার ফলে তিনি নিজেকে তৈরি করেন ইউপিএসসি ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা চাকরি পাওয়ার জন্য। যার ফলে তিনি পিএসসিতে সফল হন এমনকি ২১ টি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত পরীক্ষাতে পাস করেন। কিন্তু ২৫ বছর বয়সী শিহাব এর স্বপ্ন ছিল সিভিল সার্ভিস পাস করা, সেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি তবে তিনি এস এসএলসি পরীক্ষাতেও ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেন এবং একটা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স করেছিলেন যার ফলে তিনি এটি শিক্ষকের চাকরি ও পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পাস করার জন্য।

কিন্তু শিহাব এক গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন তার অনার আশ্রমে থাকার জীবন যাত্রা। কিভাবে তিনি প্রদীপের আলোতে পড়াশোনা করতেন, সে সমস্ত সংগ্রামের দিনগুলোকে তিনি যে ভুলতে পারেননি তিনি জানান। এমনকি শিহাব একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেছেন, একটি হোটেলের সহায়ক, কেরানি, মোটর অপারেটরের কাছে পিয়নের কাজও করেছেন। পরে অবশ্য তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষা প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন, তবে সে যাত্রাপথ যথেষ্ট কঠিন ছিল।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা প্রথম দুটিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যর্থতার থেমে থাকেনি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। যার ফলে ২০১১ সালে ইউ পি এস সি সফল হন। সর্বভারতীয় ২২৬তম রেঙ্ক করে, তবে তিনি ইংরেজিতে দক্ষ না হওয়ায়, ইন্টারভিউয়ের সময় তার এক অনুবাদকের দরকার হয়ে পড়েছিল। যার ফলে তিনি মোট ৩০০ মধ্যে ২০১ নম্বর পেয়েছিলেন কিন্তু তারপরেও তিনি চাকরিটি পেয়েছিলেন নাগাল্যান্ডের কোহিমা তে তার পোস্টিং হয়। এই থেকে বোঝা যায় চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই, চেষ্টা বারংবার করা উচিত। একদিন ঠিকই নিজের সাফল্য পাওয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button