90 বছর বয়সে এসে পরিশ্রম করে বেসন বরফি তৈরি করে নিজের দক্ষতার অর্থ উপার্জন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই বৃদ্ধা

চড়াই-উৎরাইয়ের মাধ্যমে আমাদের জীবন চলে। যারা এই চড়াই-উৎরাইকে সঙ্গী করে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে তারাই জীবনে সফল হয়, আর যারা পারেনা তারা পিছিয়ে থাকে। মেয়েদের জীবনে স্বামী একটি অপরিহার্য অঙ্গ। বিশেষত বিয়ের পরে স্বামী হল সব থেকে আপনজন। কিন্তু শেষে সেই স্বামী যখন ছেড়ে চলে যায়, তখন সেই মেয়েটির অবস্থা যে কি হয় তা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আজ এমনই একজনের গল্প বলব আপনাদের, যিনি তার স্বামী মারা যাওয়ার পরেও হাল না ছেড়ে জীবনে সফল হয়েছেন।

হরভজন কৌর এর জন্ম অমৃতসরের কাছে একটি গ্রামে। বিয়ের পর সে লুধিয়ানায় চলে আসে। প্রায় 10 বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে নিয়ে কিছুদিন চণ্ডীগড়ে থাকতে শুরু করেন সে। একদিন তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কোনো অনুশোচনা নেই, যদি তোমার কোনো ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে, যেটা অপূর্ণ তবে তুমি সেটা বল আমাকে আমি চেষ্টা করব সেটি পূরণ করার।”

হরভজন কৌর যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিল। তিনি বলেন , “আমার একমাত্র আফসোস হলো… আমি এত দীর্ঘ জীবন যাপন করছি কিন্তু একটি পয়সাও আমি নিজে উপার্জন করিনি।”

মায়ের কথা শুনে তার মেয়ে বলল, “তুমি কী করতে চাও, মানে কিভাবে তুমি উপার্জন করতে চাও?”

90 বছর বয়সী মা এই প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন তা শুনে মেয়ের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসলো। মা উত্তরে বলেছিলেন, “আমি বেসন বরফি বানাতে পারি।” তারপরে শুরু হয় মা-মেয়ের বেসন বরফির যাত্রা।

90 বছর বয়সী হরভজন কৌর যখন তার হাতে তৈরি বেসন বরফি চন্ডীগড়ের সাপ্তাহিক বাজারে পাঠাতেন তখন মিষ্টির দোকানে তার মিষ্টি চোখের নিমেষে বিক্রি হয়ে যায়। তারপরই শুরু হয় তাদের যাত্রা বেসন বরফির। তার পরিবারের সদস্যরা নিকটবতী সেক্টর 18-এর অর্গানিক মার্কেটে যোগাযোগ করেন এবং সেখান থেকে 5 কেজি বেসন বরফির প্রথম অর্ডার পান।

বরফিটি হাতে হাতেই বিক্রি হয়েছিল এবং হরভজন, তার মুঠোয় প্রথম উপার্জন অনুভব করে, শুধু বলেছিলেন, “আপনার উপার্জিত অর্থের ক্ষেত্রে যা ঘটে তা অন্য কিছু।” তারপর তিনি তার আয় তিন মেয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেন।

পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন মা নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু এখন তার এই “দক্ষতা” অনুসরণ করার ইচ্ছা ছিল। শীঘ্রই, বরফির খ্যাতি এলাকা এবং প্রতিবেশীদের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে এবং হরভজন কৌর ‘অর্ডার’ নিয়ে তার বাড়ির রান্নাঘরে আরো অনেক কিছু তৈরি করতে শুরু করে। বাদাম শরবত, আইসক্রিম, টমেটোর চাটনি, ডালের পুডিং, আচার ইত্যাদিও এখন এই বৃদ্ধা মা অর্ডার লিস্টের মাধ্যমে সরবরাহ করছেন। যদিও অর্ডারের পূর্ণতা ধীর, সবাই সারিতে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত কারণ, এটি স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তারা নিজেরাই তাদের অর্ডার দেওয়ার জন্য ভিড় জমায়।

হরভজন কৌরের গল্পটি শোনার পরে, কিছু লোক তাদের বাবা-মায়ের জন্য এরকম কিছু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন যে এটি সেই বয়সের বয়স্কদের ক্ষমতায়নের একটি উপায় হতে পারে, যখন তারা নিজেদের উপর রাগান্বিত হয় বা কখনও কখনও খিটখিটে হয়ে ওঠে কারণ তারা সারাদিন একা একা বসে থাকে। কিন্তু এভাবে তাদের ‘ক্ষমতায়ন’ করে সমাজের উপযোগী হওয়ার অনুভূতিতে ভরপুর করা যায়।

কিছু করার জন্য যে বয়সের প্রয়োজন হয়না তার জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ এই গল্পটি। এদিকে বয়স 90 পেরিয়ে তিনি রান্নাঘরে বেসন ভাজলেন এবং তাতে তার সমস্ত ইচ্ছা ঢেলে দিলেন। এটি যা সুখের, শান্তির, সুখের ঐশ্বর্য, যা বারবার তার হৃদয় যাওয়ার পথে সাথে লীন হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button