100 জন কৃষকের কাছ থেকে ফসল নিয়ে 12 রকমের চিপস তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করলেন এই যুবক, বিদেশের মাটিতেও পৌছালো ভারতের স্বাদ…

কর্নাটকের শৃঙ্গেরীতে বসবাসকারী ভরদ্বাজ কারান্থ সবসময়ই তার এলাকার জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। তিনি দেখেছিলেন কিভাবে মানুষ ভালো জীবনের সন্ধানে বড় বড় শহরে গিয়ে বসবাস করে এবং তিনি নিজে একজন কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি কৃষকদের সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে পারতেন। তিনি কৃষকদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন এবং এর জন্য তিনি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত বেছে নিয়েছেন।
28 বছর বয়সী ভরদ্বাজ কম্পিউটার সায়েন্সে এম.এস.সি করেছেন এবং এরপরে পি.এইচ.ডি করতে কোয়েম্বাটুর যান। পি.এইচ.ডি-র জন্য তাঁর বিষয় ছিল ডিজিটাল প্রসেসিং যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি কলেজে যোগ দেন এবং প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একইসঙ্গে তিনি কীভাবে তার এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন তা নিয়েও ভাবতে শুরু করেন।
তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, তাজা ফসল পরিবহনের কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং এই সমস্ত সমস্যা দেখে তিনি মনে করেন যে, এমন কিছু করা উচিত যাতে এলাকায় কর্মসংস্থান হয়।
2014-17 মধ্যে, ভরদ্বাজ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের সাথে সময় কাটিয়েছেন এবং নতুন অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করেছেন। তিনি অনেক কৌশল দেখেছেন কিন্তু এইসব কৌশল প্রাকৃতিক ছিল না।
তারপর তিনি ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতন দেশে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। সেখানে শাকসবজি এবং ফলমূল শুকনো আকারে খাওয়া হয় এবং তাও কোন সংযোজন ছাড়াই।
ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে যে মেশিনের সাহায্যে খাবারগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তা আনার জন্য ভরদ্বাজের 40 লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। এজন্য তিনি বন্ধুবান্ধব এবং নিজের আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণের আবেদন করেন। তারপর 2017 সালে, তিনি ‘কারেন্ট ফুডস’ শুরু করেন এবং এখন ‘ফ্রুট ট্রিট’ ব্র্যান্ড নামে তিনি কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, ভেন্ডি, আম, মিষ্টি আলু ইত্যাদির মতো 12 রকমের স্নাক্স তৈরি করেন এবং প্রতি বছর তিনি প্রায় 100 জৈব কৃষকের কাছ থেকে প্রায় 100 টন ফল কেনেন।
ভরদ্বাজের ইউনিটের চিপগুলি ভ্যাকুয়াম ড্রাই প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি। যার কারণে প্রায় 80-90% কম তেল প্রয়োজন হয় এই মেশিনগুলি চালাতে। স্ন্যাকসগুলো 100% প্রাকৃতিক, যার ফলে কোন রাসায়নিক এবং সংরক্ষণকারী জিনিসের ব্যবহার নেই।
তিনি যখন তার কোম্পানিটি শুরু করেন তখন তার নাম ছিল ‘সুবিধা ফুড এন্ড বেভারেজ’, যা তিনি পরে পরিবর্তন করেন এবং বেশকিছু পরীক্ষার পর 2018 সালের জানুয়ারিতে তাদের পণ্যের প্রথম ব্যাচ বাজারের জন্য প্রস্তুত হয় এবং তিনি 1,500 বর্গফুট ভাড়ার জায়গা দিয়ে শুরু করেছিলেন, যা এখন 7000 বর্গফুটে পৌঁছেছে।
তার এই কোম্পানি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কৃষকরা। তবে কৃষকদের আস্থা অর্জন করতে তার অনেক সময় লেগেছে। প্রথম প্রথম তিনি নিজেই কৃষকদের কাছ থেকে ফল সবজি আনতে গেলেও, কৃষকরা নিজেরাই এখন তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেন।
ভরদ্বাজ তার গ্রাহকদের সাথে একটি ভাল সম্পর্ক তৈরী করেছেন। এই যাত্রায় ভরদ্বাজকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কারণ বড় শহর থেকে দূরে কোন এলাকায় কোম্পানি চালাতে অনেক সমস্যা হয়। প্রথমে তাকে যন্ত্রপাতির জন্য অর্থ সংগ্রহে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যাই হোক এই সমস্ত ঝামেলা সত্বেও তার স্ন্যাকসের স্বাদ এবং গুণমান তাকে বাজারে একটি সম্মান অর্জন করতে সাহায্য করেছে।
বুদ্ধিমত্তার জোরেই বিনিয়োগ ভরদ্বাজের কোম্পানীর জন্য একটি বিশাল অর্জন ছিল এবং এখন তিনি ‘রুচিরা’ নামে একটি নতুন ব্যান্ড চালু করেছেন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মসলা এবং সিজনিং পাওয়া যায়।
শেষ পর্যন্ত ভরদ্বাজ শুধু বলেন, তার লক্ষ্য হলো এলাকায় আরও কর্মসংস্থান তৈরি করা। প্রায় মানুষই মনে করেন যে, এই ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারণা ভুল, কারণ পরিশ্রম করে সৎ ভাবে এগিয়ে গেলে সবই সম্ভব।