‘সৌর লজ্জা’ নামে একটি মেশিন তৈরি করে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কারণে হওয়া যেভাবে পরিবেশ দূষণ কিছুটা রোধ করে সবাই লাগিয়ে দিয়েছে এই যুবতী

ঋতুস্রাব মহিলাদের একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু এটিকে সাধারণভাবে মেনে নিতে নারী ও সমাজ উভয়েরই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সমাজ সচেতনতার মাধ্যমে যদিওবা শহরের মানুষদের অল্পবিস্তর সচেতন করা যাচ্ছে, কিন্তু গ্রামগঞ্জে এখনও মানুষ এটিকে একটি ট্যাবু হিসেবেই দেখে। সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে, এখনকার দিনেও মহিলারা ঋতুস্রাবের সময় বিভিন্ন অনিরাপদ জিনিসপত্র ব্যবহার করে, যেমন ছাঁই, ঘাস, পুরনো কাপড়, ছেড়া ন্যাকড়া এবং এগুলি তারা পুনঃব্যবহার করে যেটি তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ’ এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, মাত্র 58% মেয়ে বা মহিলারা নিরাপদ উপায় ব্যবহার করে যার বেশিরভাগই স্যানিটারি ন্যাপকিন।
এবার এই দ্বিতীয় সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, যেটি হল স্যানিটারি ন্যাপকিনের সঠিক ব্যবস্থাপনা। স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবেশকে দূষিত করে। ‘মেনস্ট্রুয়াল হেলথ অ্যালায়েন্স ইন্ডিয়া’র মধ্যে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন নিষ্পত্তি হতে 500 থেকে 800 বছর সময় লাগে। কারণ এগুলি তৈরি করতে নন-বায়োডিগ্রেডেবেল প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক।
তবে আজকালকার দিনে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পুনের বিকল্প হিসেবে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এই সম্পর্কে কম সচেতনতার কারনে এর ব্যবহার এখনো বেশিরভাগ শহরেই সীমাবদ্ধ এবং এই সীমাবদ্ধতার সবথেকে বড় কারণ হলো মেয়েদের মধ্যে ভয়।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে মুম্বাইয়ের ডক্টর মধুরিতা গুপ্তা ও তার ভাই রুপম গুপ্তা মিলে একটি বিশেষ স্যানিটারি ন্যাপকিন নিষ্পত্তি করার মেশিন তৈরি করেছেন যার নাম ‘সৌর লজ্জা’। দুই ভাই-বোন, গ্রীনটেক ইনোভেশন প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি স্টার্টআপ চালাচ্ছেন।
এই মেশিনটি বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে চলে এবং কমিউনিটি এলাকায় পাশাপাশি বাড়িতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের পাশাপাশি ট্যাম্পন, ড্রাইপার এবং অন্যান্য বায়োমেডিকেল বর্জ্যও এই মেশিনের সাহায্যে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।
মধুরিতা পেশায় একজন পশু চিকিৎসক এবং এছাড়াও ‘মাইভেটস ওয়াইল্ডলাইফ’ স্ট্রাস্টের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
তিনি বলেন, “আজকাল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
তার জন্য মধুরিতা সিদ্ধান্ত নেন তাকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে যাতে মহিলাদের প্যাড বা কাপড় ইত্যাদি ফেলার জন্য কোন নির্জন স্থানে না যেতে হয় এবং তার কারণে বন্যপ্রাণীরা যাতে অসুবিধার সম্মুখীন না হয় এবং পরিবেশও দূষিত না হয়।
ডক্টর মধুরিতা বলেন যে, এই মেশিনটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং অন্যান্য মেশিন এর তুলনায় 25% কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং একদিনে এই মেশিনটি 200 টি প্যাড নিষ্পত্তি করতে পারে এবং তাদের ছাঁইতে রূপান্তরিত করা যায়। প্যাড ছাড়াও এটি সুতি এবং পাটের কাপড় নিষ্পত্তি করে এবং এই ছাঁই মাঠে বাগানের উদ্যানপালনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
মধুরিতা তার প্রতিটি ইউনিটের সাথে হাজার হাজার নারীর জীবনে পরিবর্তন আনছেন। অন্যান্য দেশেও তার মেশিনের চাহিদা বাড়ছে। যার সবথেকে বড় কারণ হলো তার মেশিনটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
যাইহোক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, মাসিকের সময় মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু আপনি যদি এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন তাহলে ব্যবহারের পর সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করুন।