পরে থাকা জামা-কাপড়ের টুকরো দিয়ে যে অভিনব কায়দায় নতুন জামা-কাপড় তৈরি করে শতাধিক অনাথ শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, সাথে পরিবেশ দূষণও রোধ করছেন এই মহিলা

আমরা সকলেই কমবেশি টেলারের কাছে জামা সেলাই করতে দিই। তার কাছে জামা বানাতে দেওয়ার সময় আমরা বলি যেটুকু কাপড় বেঁচে যাবে সেটি যেন তারা ফেরৎ দিয়ে দেয়। তারপর আমরা সেটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে ছোট জামা-কাপড় বা অন্য কোনো ডিজাইনের কভার ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করি। আমাদের জামা কাপড় তৈরি হওয়ার পরে যা অবশিষ্ট কাপড়টি পড়ে থাকে তা দিয়ে বাচ্চাদের জামা বালিশের কভার বা অন্যান্য সামগ্রী খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায়।

তবে বেশিরভাগ জায়গায় আপনারা দেখতে পাবেন টেলারিং এর দোকানে কাপড়গুলি আবর্জনার স্তূপাকারে থাকে। এছাড়াও টেলারিং এর দোকানে অনেক টুকরো কাপড় পড়ে থাকতে দেখবেন, তারা সেগুলিকে আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয়। আপনি কি জানেন এই কাপড় পরিবেশ দূষণের 10 টি কারণের মধ্যে একটি।

একটি টি-শার্ট আর জিন্স বানাতে হাজার হাজার লিটার জল অপচয় হয়। সেজন্য আজকে সবাইকেই এই নিয়ে ভাবতে হবে। এজন্য আমাদেরকে বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট প্রচেষ্টা গুলির মাধ্যমে আমরা পরিবেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারি। যেমনটা করছেন ফরিদাবাদে বসবাসকারী রিতু সিং।

একজন এম.বি.এ স্নাতক, পড়াশোনার পর কয়েক বছর ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। সেখান থেকেই তিনি জানতে পেরেছেন এই শিল্পগুলি কিভাবে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যার কারণে তিনি আজকাল ‘টেকসই ফ্যাশন’ নামক একটি ব্লগ লিখছেন।

রিতু একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, “গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন স্তরে পরিবেশের জন্য ছোট-ছোট পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হলো যে, সে টেলারের রেখে যাওয়া ছোট ছোট কাপড়গুলি সংগ্রহ করে তা পুনরায় ব্যবহার করছেন।”

তিনি বলেন, “আমি প্রায় চার বছর ধরে এই কাজটি করছি। আমি প্রায়ই দেখেছি দর্জিরা সব সময় এই ধরনের কাপড়ের টুকরো জমা করে রাখে, এরপর একসময় তা আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেয়। এটি দেখে আমার মনে ভাবনা এল এগুলো তো সবই নতুন জামা কাপড়ের টুকরো তাহলে এগুলো একত্রে আমরা নতুন কোন ডিজাইনে কেন ব্যবহার করতে পারছিনা বা বানাতে পারছিনা? এটি ভেবেই আমি সেই সমস্ত কাপড়গুলো সংগ্রহ করতে লাগলাম এবং সেগুলি দিয়ে বিভিন্ন বাচ্চাদের জামা কাপড় তৈরি করতে লাগলাম এবং সেগুলিকে বিভিন্ন অনাথ আশ্রমে দান করা শুরু করলাম।”

এখনো পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিশুর হাতে এভাবে তৈরি পোশাক পৌঁছে দিয়েছেন রিতু। তিনি আরো বলেছেন যে, সম্প্রতি তিনি ওড়িশার কৃষক জলন্ধর প্যাটেলের গল্প পড়েছিলেন যিনি 25 জন নিঃস্ব বৃদ্ধ লোকের যত্ন নিচ্ছেন। সেটি থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজে আরও উৎসাহিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button