জাতীয় অ্যাথলেটিকে একের পর এক সোনা জিতে আজ বাংলার সোনার ছেলে পরিযায়ী শ্রমিক! কোনদিন কেউ নিন কোনো খোঁজ নিয়ে দেখেনি

আবারো অবহেলায় হারিয়ে যেতে চলেছে আরো এক প্রতিভা, তারই খোঁজ পাওয়া গেল সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের অশোক গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের এই যুবক, যার নাম রিঙ্কু । বছর ২৬ শের এই যুবকের দুচোখে ছিল স্বপ্ন, কারণ ছোট থেকেই সে খেলাধুলায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন।
হরিয়ানায় ২০০৯ সালে ন্যাশনাল ইন্টার জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে, ১০০০ মিটার রিলে রেসে রেকর্ড গড়েছিলেন রিঙ্কু। ২ মিনিট ১.৪৯ সেকেন্ডে শেষ করেছিলেন তিনি, যার মরচে ধরা ট্রাংকে আজও আছে জং-ধরা মেডেল, আর একগাদা শংসাপত্র, সবই আজ নষ্ট হতে বসেছে। মেডেল গুলির মধ্যে চারটি সোনার কিন্তু সেই রিঙ্কু আজ পরিস্থিতির চাপে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক। সুদূর গুজরাটের সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করতে যান তিনি, দিন ৩৫০ টাকা রোজগার করেন তিনি, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন আজ এত বড়মাপের এক প্রতিভা পরিযায়ী শ্রমিক এ পরিণত হল? কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল বছর কয়েক আগে তাঁর বাবা গণেশ বর্মন মারা গেলে খেলার জীবন ফেলে রিঙ্কুকে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়।
দুই বোনের বিয়ে দিয়ে সামান্য সম্বল টুকুও হারিয়েছেন তাঁরা, এককথায় নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবার। তাই বাধ্য হয়েই এই পথ বেছে নিতে হয় তাঁকে, তবে রিংকুর কথায় জানা যায় যে, বেশ কয়েকটি জায়গা আবেদন করেছিলেন তিনি কিন্তু তাতেও তিনি চাকরি কিছু পাননি। তাই যখন গ্রামের লোকেরা তাঁকে বলে যে, খেলাধুলা করে তাঁর কিছুই লাভ হয়নি, সেসব কথা শুনে রিংকুর হতাশা ও কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। আর সাথে শোনা যায় রিংকুর আর্তি যে, যেকোনো একটি ছোট চাকরি অন্তত কি তিনি পেতে পারতেন না ?
কিন্তু এই সমস্ত অ্যাথলেটিক্সের জন্য ক্রীড়া সংস্থা অনেক সময়ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমিতাভ ঘোষ বলেন যে, তারা দুস্থ খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের চর্চা বজায় রাখার জন্য তাঁরা সাহায্যও করেন। শীঘ্রই তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন এ বিষয়ে এবং এই একই কথা বলেন জেলাশাসক আয়েশা রানিও, তিনি বলেন যে তাঁরা রিংকুর খোঁজ নিয়ে তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আর কতদিন এরকম বাংলার প্রতিভা হারাতে থাকবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সমস্ত প্রতিভাদের কথা উঠলে তবেই কেন প্রশাসনের টনক নড়বে? কেন তারা খোঁজ রাখবে না নিজেদের জেলার প্রতিভাদের?