চিনুন উবেরের মহিলা চালককে! বিস্ময়কর লড়াইয়ের গল্প অনুপ্রাণিত করবে আপনাকেও

গৃহবধূ সুষমার পক্ষে খুব সহজ ছিল না পথে বেরিয়ে পড়া। তাঁর জীবনের মন্ত্রই যে, চরৈবেতি, চরৈবেতি। 
নেহাত মজার ছলে বলা একটা কথা। কিন্তু কাকার বলা সেই কথাই যেন ইচ্ছের ফুলঝুরি হয়ে আলো করে দিয়েছিল মনের ভিতরটা। কিছু একটা করার ইচ্ছে মনের মধ্যে পাক খাচ্ছিল। কিন্তু দিশেহারা সেই অন্ধকার শেষ পর্যন্ত দূর হয়ে গেল ওই কথায়। মনে মনে সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলেন বেলুড় মঠের সুষমা মিদ্যে। তিনি গাড়িই চালাবেন। অমুকে বউ, তমুকের মা নয়— তাঁর পরিচয় হবে নিজের নামেই।

‘‘কিচ্ছু হচ্ছে না যখন ট্যাক্সি চালা না।’’

কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না। বিরাট পরিবারের সদস্য। হোক না, হাঁড়ি আলাদা। তবু গৃহবধূ সুষমার পক্ষে খুব সহজ ছিল না পথে বেরিয়ে পড়া। মনের মধ্যে ইচ্ছেটাকে রেখে দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ছেলের পড়াশোনা, দেখভাল করা— এগুলো ছিলই। বছর তিনেক আগে ছেলে ভর্তি হয় ব্যারাকপুর মিশনে। 

সুষমার স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করে দেখানোর। 

স্বামী বেনারস ওরফে সোনামণি মিদ্যে। জুট মিলে চাকরি করতেন। আচমকা চলে গেল চাকরি। তার পরে শুরু টোটো চালানো। সংসারে অভাব ছিল। শুরু হল কেরিয়ারের দিকে সুষমার এগিয়ে যাওয়া। চালাতেন প্রাইভেট কার। এর পর খানিক পথ পেরিয়ে যুক্ত হওয়া উবেরের সঙ্গে। এই মুহূর্তে তিনিই উবেরের একমাত্র মহিলা ড্রাইভার।

কেমন লাগে গাড়ি চালাতে? উত্তরে মৃদু হাসেন সুষমা, ‘‘গাড়ি চালানোটা খুব এনজয় করি। নতুন নতুন মানুষ, নতুন নতুন গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া।’’ সারাদিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা গাড়ি চালান। সকালে উঠে সংসারের কাজ সামলে বেরিয়ে পড়া। ফেরার কোনও ঠিক নেই। শহরের কোণ থেকে অন্য কোণে পথ পেরিয়ে চলে সুষমা। 
স্বামীই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।

জীবনের কথা বলতে গিয়ে সামান্য আবেগ ছুঁয়ে যায় সুষমাকে। বলেন, ‘‘আমার স্বামী না থাকলে আমার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হতো না। ও যেভাবে আমাকে সাপোর্ট করে যায়, বাড়ির কাজে হাত লাগায় সেটা সত্যিই ভাবা যায় না। ওর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’’

রবিবার সুষমার ছুটি। কখনও কখনও বেরোতে হয় বটে। তবে সেটা ব্যতিক্রম। না হলে এই দিনটা ছেলে কাছে যান তাঁরা। ছেলের খুব গর্ব তার মা’কে নিয়ে। বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন সুষমা, ‘‘ও খুব খুশি আমাকে নিয়ে। সবাইকে বলে বেড়ায় আমার কথা।’’

পরিবারের ভালবাসাই তাঁর চলার শক্তি। সেই শক্তিতে ভর করেই বেরিয়ে পড়া পথে। হয়তো আপনার সঙ্গেও দেখা হয়ে যাবে একদিন। আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হাজির হয়ে যাবেন সুষমা মিদ্যে। সকলকে গন্তব্যে পৌঁছেই তিনি পেরিয়ে যেতে থাকেন জীবনের পথ। 

তাঁর জীবনের মন্ত্রই যে, চরৈবেতি, চরৈবেতি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button