খেতে বসার আগে এই মন্ত্রগুলো পাঠ করুন, জীবনে কোনোদিনও ভাতের অভাব হবেনা

ঈশ্বরের অপার অনুগ্রহে প্রকৃতির কাছ থেকে প্রতিটি জীব খাদ্য লাভ করে। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। সৃষ্টিকর্তাকে জানার ও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সক্ষমতা কেবলমাত্র মানুষেরই আছে। তাই প্রতিটি ধর্মে খাদ্য গ্রহণের পূর্বে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতি প্রদত্ত খাদ্য যদি ঈশ্বরকে নিবেদন না করে গ্রহণ করা হয় তবে পাপই ভোজন করা হয়। সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন আমাদের একান্ত কর্তব্য।
আসুন জেনে নিই খাওয়া শুরু করার আগের ও পরে যে দুটি বেদমন্ত্র পাঠ করতে হয় সেই অসাধারণ আদর্শযুক্ত দুটি মন্ত্র।
ভোজন প্রারম্ভের মন্ত্র:
ওঁ অন্নপতেঽন্নস্য নো দেহ্যনমীবস্য শুষ্মিণঃ।
প্র-প্র দাতারং তারিষ ঊর্জং নো ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে।।
অনুবাদ: হে অন্নদাতা প্রভু, তোমার করুণায় এই অন্ন আমাদের রোগনাশক ও পুষ্টিবর্ধক হোক। জগতে দানকারীদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক। সকল দ্বিপদী ও চতুষ্পদী প্রাণী অন্নপ্রাপ্ত হোক।
ভোজন সমাপ্তির মন্ত্র:
ওঁ মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যংব্রবীমি বধ ইত্স তস্য।
নার্য়মণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।।
অনুবাদ: মূঢ়ব্যক্তিদের অন্নগ্রহণ ব্যর্থ, তারা অন্নের ঘাতক, কারণ তারা শুধু নিজেরাই অন্নপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু তাদের দুর্গত প্রতিবেশী বা বন্ধুদের খবর নেয়নি। বস্তুত তারা অন্ন নয়, পাপ ভোজন করে। হে প্রভু, সকলেই যেন পর্যাপ্ত অন্নপ্রাপ্ত হয়ে সুখী হয়।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
বোঝা যাচ্ছে যে, মন্ত্রগুলোতে শুধুমাত্র নিজের উদরপূর্তি ও রসনাবিলাসকে পবিত্র বেদ নিন্দা করেছে। বরং বন্ধু ও প্রতিবেশী কাউকে নিরন্ন রেখে খাওয়া যাবে না, কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। সবারই অন্নসংস্থানের গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে পবিত্র বেদে।
এমনকি চারপাশে আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকারী যে সকল দ্বিপদী প্রাণী, যেমন- মানুষ, পাখী ইত্যাদি; এবং চতুষ্পদী প্রাণী, যেমন- গবাদি পশু, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি রয়েছে -এদেরও অন্নসংস্থানের নৈতিক কর্তব্য মানুষের। সেই কর্তব্যকেও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এই বৈদিক মন্ত্রে।
যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই দুটি বেদমন্ত্র পাঠ করবেন, তিনি কি করে স্বার্থপর হবেন? সঙ্গত কারণেই তিনি জীবপ্রেম ও মানবসেবায় স্বয়ং উদ্বুদ্ধ হবেন। আর আমাদের পৃথিবীটাও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত ও প্রেমময় হবে। গড়ে উঠবে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব।