এক সময় বই বিক্রি করতেন এখন মুক্ত চাষ করে ৫ লক্ষ টাকা করে উপার্জন করছেন এই ব্যাক্তি!জানেন ইনি কে?

মুক্ত আমাদের কাছে অমূল্য জিনিস, মুক্তোর গয়না আমাদের প্রত্যেকেরই প্রিয়। তাই আমরা নানান অনুষ্ঠানে অনেকেই মুক্তার গয়না পড়ে থাকি কিন্তু প্রশ্ন হল সে মুক্তা আসে কোথা থেকে ? অবশ্যই ঝিনুক থেকে। কিন্তু সে সমস্ত ঝিনুক কিভাবে চাষ করতে হয়? কি পদ্ধতি তে করতে হয়? এমন প্রশ্ন প্রায়শই আমাদের মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। তবে কে সবকিছুই আমরা জানতে পারলাম সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
নরেন্দ্র গরওয়া নামে এই ব্যক্তি বছরে লাখ টাকা আয় করছেন , শুধুমাত্র মুক্তা চাষ করে। যিনি এক সময় বই বিক্রি করতেন। যিনি রাজস্থানের ওয়ালের বাসিন্দা, তিনি অত্যন্ত একটি সাধারন পরিবারের ছেলে, তবে জীবনের উন্নতির ক্ষেত্রে তিনি কঠোর পরিশ্রমকে ভয় পাননি। তাই নতুন কিছু করবার পরিকল্পনা করেছিলেন জীবনে, যার জন্য তিনি সাহায্য নিয়েছিলেন গুগলের।
গুগোল এর সন্ধান করতে গিয়েই তিনি পেলেন এই মুক্ত চাষের বিষয়টি। এরপর তিনি সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন এবং তিনি গবেষণা করে জানতে পারেন খুব কম মানুষই আছেন যারা এই মুক্তা চাষের সাথে যুক্ত।
তবে তিনি পিছিয়ে না গিয়ে বাড়ির ছাদে বাগান করা শুরু করলেন। এই সময়ে তিনি মানুষের নানা কটূক্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এমনকি তার নিজের পরিবারের সদস্যরাও তাকে পাগল বলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সমস্ত কথা কে উপেক্ষা করে তিনি আপন মনে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, যার ফলে এই মুক্তা চাষ তার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তিনি বর্তমানে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন। তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিয়ে। ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়া টাইমসকে এক ইন্টারভিউতে নরেন্দ্র জানিয়েছেন যে, তিনি প্রথমে এই চাষ শুরু করার আগে প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন মনে করেছিলেন, যার জন্য উড়িষ্যা সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার একুয়াকালচার অফিসে পৌঁছে ছিলেন।
সেখান থেকে ফিরে আসার পর অল্প পরিমাণে ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরি করা নিজস্ব ইউনিট শুরু করেছিলেন। তিনি আরও জানান যে ছোট ছোট পুকুর তৈরি করে যার ভেতরে মুম্বাই, গুজরাট, কেরালা থেকে আনা ঝিনুক (বিচ) রাখতেন এবং একসঙ্গে প্রায় ১০০০ ঝিনুক রাখতেন এবং তা থেকে প্রায় দেড় বছরের মধ্যে ডিজাইনার গোলাকার মুক্ত পাওয়া যেত। তবে নরেন্দ্র আরো বলেছেন যে, প্রায় কুড়ি শতাংশ প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যায়। তবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিলে ভালো মানের মুক্ত খুব সহজেই পাওয়া যায়, যাতে ক্ষতি পূরণ করে দিতে পারে।
তবে তিনি বর্তমানে বছরে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তবে তিনি আরো জানান বাজারে মুক্তার চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এই চাষ যদি আরো বড় পরিসরে করা যায় উপার্জন আরো বাড়ানো যেতে পারে। ইতিমধ্যেই তিনি প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী প্রভু লাল সায়নী, রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরার কাছে কাজের প্রশংসা পেয়েছেন। এমনকি তিনি সরকারি সাহায্যও পেয়েছেন।
তার এলাকায় তিনি এক পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে তিনি ১০০ জনেরও বেশি লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আশপাশের লোকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। নরেন্দ্র বলেন যে-ই মুক্তা চাষের জন্য শুধুমাত্র দরকার একটি ছোট পুকুর, মিষ্টি জল। এই মুক্ত চাষ বৈজ্ঞানিক চাষ। তাই এটি শুরু করার আগে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এ প্রশিক্ষণ সি আই এফ এর দ্বারা সময় সময় দেয়া হয় , কখনো কখনো এই মুক্তো চাষের প্রশিক্ষণ বিনামূল্যেও দেয়া হয়। সি আই এফ এর সদর দপ্তর ভুবনেশ্বরে অবস্থিত। সেখানে ১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া আরো বিশদে জানতে সিআইএফ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এখানে খবর দেখে আমাদের মত অনেকেই যুবকরা উদ্বুদ্ধ হবে। আশা করা যায়, অনেকেই এই কাজে আগ্রহ দেখাবে।