উল দিয়ে অভিনব সুন্দর রাখি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই রাজ্যের গ্রামের মহিলারা

বর্তমানে মেয়েদের বিভিন্ন স্বনির্ভর প্রকল্প গড়ে উঠেছে, মেয়েরাও এখন আত্মনির্ভর হতে চাইছে, শুধুমাত্র ঘরের সংসারের কাজকর্ম করে নিজেদের জীবন যাপন করতে কেউই রাজি নয়। এ ধরনের মহিলাদের প্রসঙ্গ এখন প্রায় সোশ্যাল সাইটে উঠে আসছে। তেমনই এক নারীর কথা যিনি প্রশংসিত হয়েছে তা হল হরিয়ানা রাজস্থান গ্রামের মহিলারা, যারা বিভিন্ন রকম হাতের কাজ যেমন সুতোর কাজ, উল দিয়ে নানা রকম জিনিস তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে চাইছেন।
তবে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যিনি তিনি হলেন জ্যোতি রানী, যিনি একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। ইনস্টাগ্রামে তাদের একটি পেজও আছে তবে পেজটির নাম শিল্পের মাধ্যমে কলা ক্ষমতায়ন। এই পেজে গিয়ে সন্ধান করলে সহজেই দেখতে পাওয়া যাবে নানা রকম হাতের তৈরি জিনিস যেমন- ল্যাপটপের হাতা, পাউচ , হেড ব্যান্ড প্রকৃতি নানান জিনিস এর দেখা মেলে। এই সমস্ত জিনিস এই হরিয়ানা ও রাজস্থানের গ্রামের মহিলারা তৈরি করেছেন। কিন্তু কে এই জ্যোতি রানী? জ্যোতি রানী হলেন হরিয়ানার একটি গ্রামে র মহিলা যিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি গ্রামের মহিলাদের জন্য কিছু করা শপথ নিয়েছেন।
তাই গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি প্লাটফ্রমও তৈরি করেছেন, যেখানে তাদের একত্রিত করা হয়েছে। তিনি সাড়ে তিন বছর উইপ্রোর গ্রেটার নয়ডা অফিসে চাকরি করেছেন। প্রথম বছর তিনি হাসি ঠাট্টা করেই কাটিয়ে ছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি অনুভব করলেন তিনি চাকরিতে খুব একটা আরামপ্রদ মনে করছেন না, তাই তিনি চাকরির পাশাপাশি একটি অনাথালয় যেতেন। নয়ডার এই অনাথ শিশুদের পড়াতেন এছাড়াও তিনি বৃদ্ধদের বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমের তথ্য অনুসন্ধান করেছেন যেখানে তিনি দেখেছেন যে তাঁরা খুবই খারাপ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
তাদের জন্য তিনি কাজ করেছেন অফিস শেষ করেও তিনি সেখানে গিয়ে সময় কাটাতেন। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দেবার এবং চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গ্রামে কাজ শুরু করেন। তিনি তার সিদ্ধান্ত তার বাবাকেও জানান এবং তার বাবা তাকে তার সিদ্ধান্ত কে সমর্থন করেন। গান্ধী ফেলোসিপের সময় রাজস্থানের ঝুনঝুনু গ্রামের স্কুলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জ্যোতি কে। সেই প্রাথমিক স্কুল এই রুকসার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। জ্যোতি রূকসার ও আরো কয়েকজন মহিলা প্রত্যেকে ৩০০ টাকা জমা দিয়ে দর্জি থেকে কাপড় নিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন রকম তৈরি করেছিলেন সেই থেকেই শিল্পের সূত্রপাত হয়।
বিভিন্ন ক্যাম্পের এই সমস্ত জিনিস গুলি বিক্রি হতো এবং সেগুলি মানুষের যথেষ্ট পছন্দ হয়েছিল। তাই ২০১৮ সাল থেকে যদিও গ্রামের মহিলারা একসাথে মিলে এই শিল্পের সূচনা করেছিল। একদল মহিলারা কাপড়ের টুকরো দিয়ে জিনিস তৈরি করত আর একদল মেয়েরা চারুকলার যোগ দেয়। এমনকি তাদের সাথে যোগ দেয় কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও , যারা পরিবারকে সাহায্য করতে চায়। হাতের তৈরি নানা পণ্য তারা তৈরি করতে শুরু করে। তবে জ্যোতি জানায় দল যখন শুরু করেছিলেন ১২- ১৩ জন মহিলাকে নিয়ে।
তবে দুই হাজার কুড়ি সালের মার্চ মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে এই শিল্প হঠাৎ থমকে যায়। তবে তারা থেমে থাকেননি আবারও তারা কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে মহিলারা নিজস্ব উপার্জনের স্মার্ট ফোন কিনেছেন হোয়াটসঅ্যাপ ইউটিউব চালাতে শুরু করেছেন। তবে জ্যোতির কথা থেকেই জানতে পারা যায় যে রূকসার বাড়ি থেকেই ব্যবসার জন্য কখনও অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে এ মুহূর্তে রূকসা উপার্জন করতে শুরু করায় তার স্বামীর মনোভাব ও বদলে যায়। তার স্বামী তাকে আস্তে আস্তে কাজের অনুমতি দেয় যার ফলে আজ রূকসার তার গ্রামের নতুন বাড়ি করেছে,
এবং তিনি আরও একজনের কথা উল্লেখ করেন, যার নাম কোমল। যার বাবা উঠ চালান, উট থেকে মাল বহন করেন। কোমল কলেজে পড়ে কিন্তু হঠাৎই উটটি মারা যাওয়ায় কোমল তার এই শিল্প কাজের মধ্য দিয়ে উপার্জন করে তার পরিবারের দেখভাল করে। এ ধরনের নানান কাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন আমরা দেখি, যেখানে মেয়েরা স্বনির্ভর হচ্ছে। নিজের মধ্যে এক অদম্য জেদ প্রতিমুহূর্তে মেয়েদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে, যা নারী সমাজকে আগামী দিন অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে মনে করা হচ্ছে।।