আপনি হয়তো চার মিনার এবং কুতুব মিনারের নাম শুনেছেন, আপনি কখনো চোর মিনারের নাম শুনেছেন? জানেন কি এই চোর মিনার?
নানা জায়গায় নানা স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক ঘটনায় জড়িত একটি দেশ হল ভারত বর্ষ। ব্রিটিশ শাসনকালে বহু আগে থেকে বহু জাতি বারবার ভারতে আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছেন, ভারতে লুণ্ঠন চালিয়েছেন।
ভারত এক ঐশ্বর্যমণ্ডিত একটি দেশ, তাই সেখানে বারবার বিভিন্ন জাতি হামলা চালায় এবং অনেকে বিভিন্ন জায়গা দখল করে তাদের আধিপত্য স্থাপন করেও ছিলেন।তার সাথে তাদের সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের ছাপও সেখানে রেখে গেছেন। তেমনি আমাদের রাজধানী দিল্লিতেও এ ধরনের বহু স্থাপত্য কলার পরিচয় রয়েছে, আমরা অনেকেই দিল্লি বলতে আগ্রা কুতুব মিনার এগুলোই বুঝি। এছাড়াও দিল্লির আনাচে-কানাচে নানা স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়, যা আজ ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়েছে, কিন্তু খুঁজলে তাদের গুরুত্ব কিছু কম হয়না, তেমনি হল চোর মিনার, অনেকেই আমরা এই নামটির সাথে ওতপ্রোত ভাবে পরিচিত নই।
এই চোর মিনার হল আলাউদ্দিন খিলজির তৈরি। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এটি নির্মিত হয়েছিল, আলাউদ্দিন খিলজী ছিলেন একজন নিষ্ঠুর শাসক, ইতিহাসে তাকে এভাবে অভিহিত করা হয়েছে। এই চোর মিনার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কারণ জলউদ্দিন খিলজির থেকে সিংহাসন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খিলজী এবং নিজেই আমির এ তুজুক হন। সেই সময় ভারত আক্রমণ করেন মোঙ্গলরা, তারা ভারতকে অধিকার করবার চেষ্টা করেছিলেন এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই সময় দিল্লির মসনদে ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজী, স্বভাবতই তাদের কে পরাজিত করেছিলেন। আরো জানা যায় যে, তেরোশো পাঁচ সালে সালে আম রোহার সিরি ফোর্টে যুদ্ধের পরে ৮০০০ মঙ্গল সেনা মারা যায়। তাদেরকে হত্যা করা হয় এই চোর মিনারে এবং এই চোর মিনারে ২২৫ টি গর্ত আছে প্রতিটি গর্ত থেকে মৃতদেহ মাথা ঝুলিয়ে দেয়া হয়, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে এটা একটা বার্তা পৌছায় যে, ভুল কাজ কর্মের অংশ হতে গেলে এই অবস্থা হতে পারে।
তবে এই মিনারের কোন ইতিহাসে অস্তিত্ব নেই, কোন নামই পাওয়া যায় না। কিন্তু অনেকের মধ্যে এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই উল্লিখিত হয়নি। ইতিহাস আজও এই চোর মিনারের সাক্ষী কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এই সুবিশাল মিনারটি বেঁচে থাকলেও তার অবস্থান হারিয়েছে। এমনই একটি মিনার আছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলাতে, সেখানে অবশ্য মুঘল গভর্নর বিদ্রোহীদের ফাঁসি দিতেন। অনেকেই আমরা মালদা গেছি অনেকেরই নজর এই মিনারটি পড়েছে , কিন্তু সে সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য আমাদের জানা নেই। আমাদের এই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে নানা অজানা ঐতিহাসিক কাহিনী, যা জানতে এবং শুনতে আমাদের বেশ ভালোই লাগে।