সেভ দ্য কক্সবাজার’র মানববন্ধন
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার নাগরিক সমাজ।
গত ২৭ আগষ্ট ২০২৫ইং তারিখ (বুধবার) বেলা ১১:০০ ঘটিকার সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক অফিস চত্বরে সেভ দ্য কক্সবাজার- এর চেয়ারম্যান সাংবাদিক তৌহিদ বেলাল এর সভাপতিত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় ও অনুপ্রবেশের কারণে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিসহ দ্রব্যমূল্যের চড়ামূল্য, সামাজিকভাবে অস্থিরতা ও অবক্ষয় এবং বিভিন্ন নেশাজাতিয় মাদকদ্রব্যের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে৷ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার জেলাবাসী রোহিঙ্গাদের ভার বহনে আর রাজি নয় ও তাদেরকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব না হলে প্রয়োজনে দেশের পার্বত্য জেলাসমুহের বিস্তীর্ণ খালি জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্হা গ্রহন করা হোক।
চেয়ারম্যান পরিবেশ, জলবায়ু সুরক্ষা ও নাগরিক সংগঠন ‘সেভ দ্য কক্সবাজার’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দেশের শতকোটি টাকা খরচ করে তিনদিনের যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলেও এর বাস্তব সফলতা নিয়ে আমরা সন্দিহান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে অদ্যাবধি সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ রুহুল কাদের বাবুল বলেন, ‘শরনার্থী, ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে অবশ্যই রোহিঙ্গা ও স্হানীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আইএসসিজি’তে সিভিল সোসাইটি ও স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে’। তিনি ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার সম্মেলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় এনজিওগুলো এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে, উপেক্ষা করে উক্ত সম্মেলন সম্পন্ন করার বিষয়ে আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বলে জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ আমানুল হক আমান বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ থাকার পরও স্থানীয় শিক্ষকদের চব্বিশ ঘন্টার নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা শিক্ষকদের একজনেরও চাকরি চলে যায়নি। এই বৈষম্য ও অন্যায় সিদ্ধান্তের পশ্চাতে এনজিও প্লাটফর্মের ভূমিকা রহস্যজনক বলেও তিনি জানান। কক্সবাজার জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে তথাকথিত এনজিও প্লাটফর্মের কার্যক্রম জরুরী ভিত্তিতে বন্ধসহ পাশাপাশি তাদের ফান্ডও বন্ধ করে দিতে হবে’।
প্রধান বক্তার আলোচনায় সাবেক ব্যাংকার ও রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চলমান সমস্যার অদ্যাবধি কোন সুরাহা না হওয়ার কারনে স্থানীয়দের মধ্যেও এব্যাপারে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বলে জানান। চলমান এই সমস্যার সমাধান ও নিরসনকল্পে এনজিও প্লাটফর্মের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই বলেও জানান। তথাকথিত এনজিও প্লাটফর্ম দেশের স্বার্থেসহ প্রত্যাবাসন ও শিক্ষকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধেও কৌশলগত অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান। এনজিওগুলোর এই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নেদারল্যান্ডসে বসে আমাদের দেশের মোটা অংকের বেতন-ভাতার টাকা নিচ্ছেন, যা বন্ধ করতে হবে’।
মানবাধিকার ও সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বাহাদুর প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে যে সকল এনজিও জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবী জানান এবং কক্সবাজারের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্থিরতার জন্য দায়ী ও জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানান।
সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী রতন দাশের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- প্রবীণ সাংবাদিক আশেকউল্লাহ ফারুকী, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী নূর মোহাম্মদ, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক আবদুর রহমান হাশেমী, শিক্ষাবিদ মাওলানা ইউসুফ মক্কী, সাংবাদিক মুহাম্মদ হোসেন সুমন, সমাজকর্মী ও শ্রমিকনেতা হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মনসুরুল ইসলাম চৌধুরী।