রাজীব দাশ
লালদীঘির মাঠে চলছে ১৫ দিনের বৃক্ষমেলা
চট্টগ্রাম: নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠে চলছে ১৫ দিনের বৃক্ষমেলা। মেলায় প্রবেশ করলে হাতের বাঁ পাশে জান্নাত শপ ডট সিটিজি নামের দোকান।
সেই দোকানে অন্যান্য গাছের সঙ্গে দেখা মিলবে চারকোনা একটি চোট্ট টবে ডালপালা ছড়ানো বয়োবৃদ্ধ এক গাছের। যার বয়স লেখা রয়েছে ৪৪ বছর।
সাইকাস গ্রীন আইসল্যাণ্ড (চাইনিজ বটগাছ) গাছটি মাত্র আড়াই ফুট উচ্চতার। যার দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। গাছটি দেখতে স্টলটিতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
মেলায় দেশি-বিদেশি নানান ফুল, ফল, ঔষধি আর শোভাবর্ধক গাছ যেমন আছে, তেমনি আছে দামেরও বিস্তর ওঠানামা। বৃক্ষমেলায় প্রতিবারের মতো এবারও দেখা মিলল লাখ টাকা ছাপিয়ে যাওয়া কিছু গাছের।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গাছটি পরিচর্যা করে আসছেন জান্নাত শপ ডট সিটিজির স্বত্বাধিকারী আত-তাওয়াবুল ইসলাম ও তার মামারা। তার সঙ্গে কথা হয় তিনি জানান, সর্বপ্রথম ১৯৮১ সালে ভারত থেকে তার মামা চাইনিজ বটগাছের একটি চারা চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। এরপর গাছটিকে তিনি বনসাই গাছে রূপ দেন। এভাবে বছরের পর বছর পারিবারিকভাবে তারা গাছটিকে পরিচর্যা করে আসছেন।
তিনি আরও জানান, এ গাছের তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই, কেবল সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এ গাছটি কিনে থাকেন অনেকে। বিশেষ করে যারা বাড়িতে ছাদবাগান করেন তারাই এই ধরণের গাছ কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে নগরের হিউভিউ আবাসিক এলাকা ও সরাইপাড়ায় তাদের দুটি ছাদবাগান রয়েছে। এ বাগান দুটিতে হরেক রকমের গাছের চারা উৎপাদন করছেন তারা। যা প্রতিবছর বিভিন্ন বৃক্ষমেলায় তারা প্রদর্শন করে আসছেন।
তিনি আরও জানান, বীজ সংগ্রহ, চারা তৈরি, টব প্রস্তুত, সার ও মাটি প্রয়োগ, শাখা বাছাই, ছাঁটাই, তার বাধাসহ বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করে একটি বনসাই করতে হয়। যা অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যববহুল। আমি ২০০৫ সাল থেকে গাছের বনসাই করতে শুরু করেছি। বর্তমানে আমাদের ছাদবাগানে প্রায় ৫’শতাধিক বনসাই গাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিবছর আমরা বনসাই গাছগুলো মেলায় আনি বিক্রির জন্য।
সাইকাস গ্রীন আইসল্যান্ড নামে এ গাছটি এ বছর বৃক্ষমেলায় সর্বোচ্চ দামি গাছ। তবে এটি ছাড়াও জান্নাত শপ ডট সিটিজিতে আরও বেশকিছু দামি গাছের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী একটি তেঁতুল গাছের দাম ৫০ হাজার টাকা, ১৪ বছর বয়সী সাইকাস গ্রীন আইসল্যাণ্ডের দাম ১৫ হাজার টাকা, ৯ বছর বয়সী পাকুড় গাছের দাম ১০ হাজার টাকা, ৮ বছর বয়সী আমবট ও লং আইসল্যাণ্ডের দাম ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও ৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দামের ৩০০ প্রজাতির ক্যাকটাস ও ৬ প্রজাতির এডেনিয়াম ও ১২ প্রজাতির বনসাই রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ নার্সারিতে আনা হয়েছে আরও তিনটি বনসাই গাছ। সেখানে একটির দাম ১২ হাজার টাকা অন্য দুটির দাম ৮ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ নার্সারিতে কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, বনসাই গাছের পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের ঔষধি ও শোভাবর্ধক গাছ রয়েছে আমাদের এখানে। বেচাও রয়েছে ভালো। বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ আয়োজিত এ বৃক্ষরোপণ অভিযান ও মেলা শুরু হয় ২৮ জুলাই। ১৫ দিনব্যাপী এ মেলা ১১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের মেলায় মোট ৬০টি নার্সারি ও চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার ৬৫ প্রজাতির গাছ প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব নার্সারির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের হরেক প্রজাতির চারা গাছ। আছে নানা প্রজাতির ফুল গাছের চারাও। নানা ধরণের ক্যাকটাস, লাকি বাম্বু, অর্কিড, এরাবিকাম সোমালিয়ান গটজি, এমকে এমকে নামের এডেনিয়াম, থাই কাঠগোলাপও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এছাড়াও আওলান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দের স্টলে দেখা মিলেছে নোনাপানি সহনীয় গাছের চারা। ২০০ টাকায় কেওড়া, সুন্দরী, ছাদবাগানে মধু চাষের মৌমাছিসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিক্রি হচ্ছে এ স্টলে।