এম কে আলম চৌধুরী
চট্টগ্রাম – কক্সবাজার রেলপথে চালু হল ট্রেন, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়
অবশেষে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে চালু হলো দুই জোড়া ট্রেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি যাত্রার প্রথম দিনেই সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসে ছিলো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। নিয়মিত ট্রেন পেয়ে খুশি যাত্রীরা। তবে সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ। নতুন রেলপথে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন। এখান থেকে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম ছুটবে প্রবাল এক্সপ্রেস। তাই আগেভাগেই স্টেশনে হাজির শত শত যাত্রী। অপেক্ষা কখন আসবে ট্রেন, কখন বাজবে হুইসেল। যাত্রীদের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। তাদের আশা, দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় রেলযাত্রা হবে ভোগান্তিহীন।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কখনও ভাবিনি কক্সবাজার থেকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম যাব। অবশেষে আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে, এখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে প্রবাল এক্সপ্রেসে চড়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য বড় একটি সু-খবর।
সৈয়দা বেগম নামের যাত্রী বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, বিদেশ বিদেশ ভাব। অনেকবার ট্রেনে চড়েছি, কিন্তু কক্সবাজার থেকে এইবারের প্রথম ট্রেনে চড়া।
যাত্রী লুৎফুল নেছা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে কক্সবাজার পৌছাতে সময় লেগেছে ৬ ঘন্টা। কিন্তু এখন অনেক নিরাপদে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা চট্টগ্রাম পৌছাব। এদিকে যেমন সময় বাচবে, ঠিক তেমনি টাকাও সাশ্রয় হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে সোয়া ৬ টায় ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিল ৯ টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু সেটি পৌঁছায় ৩০ মিনিট দেরিতে।
সৈকত এক্সপ্রেসের যাত্রী ইব্রাহিম কাদের বলেন, ট্রেনটি অনেক স্টেশনে থেমে থেমে এসেছে। যার কারণে কক্সবাজার পৌছাতে ৩০ মিনিট দেরি হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়ে কক্সবাজার পৌছাতে তাহলে ভাল লাগত।
আরেক যাত্রী নজিব উল্লাহ বলেন, আমরা ক-বগি ছিলাম। মনে হয়েছে ব্রিটিশ আমলে বগি। ট্রেনে সিট ও পরিবেশ খুবই নোংরা মনে হয়েছে।
ইশরাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন যাত্রা। মনে হয়েছে, এই ট্রেনে চড়ে ইতিহাসের অংশ হব। যার কারণে ১০দিন আগে টিকিট করেছি। কিন্তু ট্রেনের যে করুণ অবস্থা ছিল সেটা বলার মতো না। এখন মনে হচ্ছে এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নতুন রেলপথে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।
স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস কক্সবাজার পৌছানোর কথা ছিল ৯ টা ৫৫ মিনিট। কিন্তু এসেছে ১০ টা ২৫ মিনিটে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম নতুন রেললাইনে কিছু কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। বিশেষ করে, হাতি চলাচলের যে স্থান রয়েছে সেখানে ট্রেনের গতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। ৩টি স্থানে ট্রেনের গতি সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু বেলা ১১টায় ছেড়ে গিয়েছে। প্রথম দিনে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সেটি ঠিক হয়ে যাবে।
মো. গোলাম রব্বানী আরও বলেন, সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস ওয়াশের স্থান হচ্ছে চট্টগ্রাম। তারপরও ট্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সবসময় খেয়াল রাখা হচ্ছে। চেষ্টা করছি, যাত্রীদের কাছে যেন সেবার মান বাড়ানো যায়। যদি যাত্রীদের কোন অভিযোগ থাকে তা খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা প্রায় দেড় হাজার। সপ্তাহে সোমবার ছাড়া প্রতিদিনই ট্রেন দুটি চলবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে।