আমান উল্লাহ দৌলত
সাঈদীর মৃত্যু মেডিক্যাল কিলিং কি না জানাতে হবে: মিজানুর রহমান আজহারি
চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারি বলেছেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শিরক-বিদআতের আস্তানা তছনছ করে দিয়েছিলেন। আজীবন ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব কেঁদেছে।
তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি মেডিক্যাল কিলিং ছিল, তা আমরা এখনো জানি না। এখন বিষয়টি তদন্ত করে জাতির সামনে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের পঞ্চমদিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এই কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ কোরআনে তিনটি আদেশ তিনটি নিষেধ করেছেন।
আদেশ তিনটি হল ন্যায় বিচার করা, একে অপরকে সম্মান করা ও নিকট আত্মীয়দের সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আর তিনটি নিষেধ হল অশ্লীলতায় না জড়ানো ও ইচ্ছাকৃত মন্দ বা অসৎ কাজে না জড়ানো ও সীমালঙ্ঘন না করা। এই আদেশ নিষেধ মেনে নিতে পারলে আমাদের সমাজ সুখী, সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে স্মৃতিচারণ করে মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দী রেখে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশারের সঞ্চালনায় ও ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাওলানা শামীম সাঈদী, বক্তব্য রাখেন মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বিআইএ জামে মসজিদের খতিব সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি, অলি খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ।
মাহফিলে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবিরী আল মাদানী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা সাঈদী বিজড়িত ময়দান। আমরা কোরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনো ভাবে আমাদের এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সব ধরনের ইসলামী দল গুলোর মধ্যে যদি আমরা ঐক্য ধরে রাখতে পারি তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি , লুটপাট ও চাঁদাবাজি, গুম, খুন দূর করতে পারবো। ১৬ বছরের জঞ্জাল ৬ মাসে দূর করা সম্ভব না কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমারা আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো। এদেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যদি সূখ শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সরকার। আপনারা হতাশ হবেন না। আমরা আপনাদের সাথে আছি। চট্টগ্রামের জনগণও আপনাদের সাথে আছে। তিনি কওমি ও সরকারি নিছাবের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করার আহবান জানান। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উন্নয়নের সরকারি সহযোতিার আহব্বান জানান। ইবাতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি এবং মসজিদের ঈমাম মুয়াজ্জিমদের বেতন কাঠামো নির্ধারন করে সরকারিভাবে বেতন প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, আল্লামা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীকে ১৩ বছর জেলে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাÐের বিচার দাবি করছি। কোরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা সাঈদী দেশের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। কোরআনের রাজ কায়েম করতে যদি আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় আমরা সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো।
বিশেষ ওয়ায়েজিন মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান বলেন, এ পৃথিবীতে যারা কোরআনকে বিদায় করতে চেয়েছে তারাই বিতাড়িত হয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করে যেতে হবে। পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। অনৈক মতভেদ, বিভেদ সৃষ্টি করলে জালেমরা সুযোগ নিবে। আল্লাহ আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট এসাইন্টমেন্ট দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর বিধানকে দুনিয়ার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে বাংলাদেশে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ যেন অন্যায়ভাবে লুটপাট করতে না পারে। নির্যাতনের আয়নাঘর তৈরি করতে না পারে। শোষণ নিপীড়ন করতে না পারে, গণহত্যা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথমত আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর খলিফা। যারা ভেতরে ও বাহিরে পবিত্র নেক বান্দাদের আমাদের অন্তর্ভূক্ত করো। যারা জালেম তাদের লেজ কেটে দিয়েছে এবং এখন বান্দার দায়িত্ব আল্লাহর প্রশংসা করা ।