মনছুরুল ইসলাম চৌধুরী
চকরিয়ায় হাপসা হত্যার ঘটনায় স্বামী মেহেদীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাা
চকরিয়ায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় পাষন্ড স্বামী শওকত হাসান মেহেদীসহ তার মা-বাবা ও বোনকেও আসামী করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) মেয়ের পিতা ব্যবসায়ি আবদুল হামিদ বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আজমুল্লাহ পাড়ার মৌলভী আবুল হাশেমের পুত্র শওকত হাসান মেহেদী, তার স্ত্রী মমতাজ বেগম, মেহেদীর পিতা মৌলভী আবুল হাশেম, মেয়ে সুমাইয়া আক্তার ও একই এলাকার মৃত ইদ্রিস আহমদের পুত্র আবদুল হাকিম।
স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে উম্মে হাপসা তুহি’র সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বখাটে স্বামী শওকত হাসান মেহেদীর মধ্যে। গত ৮মাস পূর্বে প্রেমের সম্পর্কের সুত্র ধরে হাপসা ও মেহেদী দুইজনই পালিয়ে যায়। পরে হলফনামা নামা মুলে বিবাহ সম্পাদন করেন। তাদের বিয়ে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি মেয়ের বাবা-মা। দুই জনের বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে। হাপসার বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব নিজপানখালী মজিদিয়া মাদ্রাসাপাড়ায়। মেহেদীর বাড়ি পাশ^বর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আজমুল্লাপাড়ায়। মেহেদী একজন বখাটে ও টিকটকার হিসাবে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে। একাধিক মেয়ের সাথে পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে তার। তার নানা অপকর্ম জানতে পারলে বাধা দেয় হাফসা। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হাপসাকে নিষেধ করে মেহেদী। একপর্যায়ে হাপসাকে মারধর করে। স্বামীর অপকর্ম গুলো তার মা-বাবাকে বলার হুমকি দিলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় মেহেদী।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাফসা বাপের বাড়িতে চলে আসে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয় স্বামী মেহেদী। ১৬ জানুয়ারি মেহেদী শ্বশুর বাড়িতে যান তার স্ত্রীকে আনতে। হাপসাকে তার বাড়িতে চলে যেতে চাপ দেন। না গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন মেহেদী। ওইসময় শ্বশুর বাড়ির একটি কক্ষে হাপসাকে মারধরও করেন স্বামী মেহেদী। মেহেদী বৃহস্পতিবার রাতেই চলে গেলেও শুক্রবার সকালে পূনরায় চলে আসে শ্বশুর বাড়িতে। ঘটনারদিন শুক্রবার সকালে হাপসাকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে তার শ্বশুর আবদুল হামিদ ও শ্বাশুড়ি পারভীন আক্তার বাধা দেন। মেহেদীর মা-বাবাকে নিয়ে আসলে হাপসাকে যেতে দেবেন বলে দেন তাকে।
দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে যান বাড়ির সবাই। এ সুযোগে মেহেদি অতর্কিত এসে হাপসা ও তার মাকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন জুমার নামাজ পড়ে এসে তাদের আহত অবস্থায় দেখে দ্রæত হাসপাতালে নেয়া হলে হাপসাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে শ্বাশুড়ি পারভীন আক্তারের অবস্থায় আশঙ্কাজনক হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
চকরিয়া থানার ওসি মো. মনজুর কাদের ভুইয়া বলেন, ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় মুল আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঘটনায় মেহেদীকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া ৩-৪জন আসামী অজ্ঞাতনামা রয়েছে এজাহারে। আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।