রুপন দত্ত – আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ২ টি মামলায় আসামি করা হয়েছে মোট ১২৭ জনকে । এর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। তবে ভুগছেন নিরীহরাও। আওয়ামী লীগ কিংবা তার অঙ্গ সংগঠনের সাথে কোন ভাবেই সংশ্লিষ্ট নন অথবা কখনো রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে কোনদিন অংশগ্রহণ করেনি এমন অনেকের নাম আসামির তালিকায় রয়েছে। শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত কিংবা জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ অথবা শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। গুন্জন রয়েছে অনেকে টাকার বিনিময়ে আসামী করেছেন নিরীহ বেশ কয়েকজনকে।
আনোয়ারা থানা পুলিশের তথ্যমতে, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আনোয়ারা থানায় এসব মামলায় মোট এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছে ১২৭জন, অজ্ঞাতনামা রয়েছে প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০ জনের মত। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে সাবেক ভূমি মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ,সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান সহ প্রভাবশালী অনেক রথি মহারথিদের। বাদ যায়নি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান , উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছগির আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল, নঈম,নাসির,গোলাম নবী,খায়ের আহমদ, আশীষ নাথ, অভি দত্ত ছাড়া প্রভাবশালী কোন নেতাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। আসামীদের আটক করতে পুলিশ তৎপর থাকলেও মোটামুটি সবাই রয়েছে পলাতক। অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন পরিষদে না আসলেও তারা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসে তারা তাদের দাপ্তরিক কাজ সেরে নিচ্ছেন। এতে সেবা পাচ্ছে জনগণ। এতে তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছেনা। তবে এই বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন আগে সমন্বয়ক জুবায়ের তার ফেইসবুকে আইডিতে লাইভ করে এসব বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
পুলিশ বলছে এ মামলা গুলো রাজনৈতিক । তারা জানিয়েছে, আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও দলটির সহযোগী সংগঠনের । কিছু আসামি রয়েছেন বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির মানুষ।৩ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মামলায় পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মামলা গুলো অসংগতিতে ভরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকার পরও রাজনৈতিক কারণে অনেককে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পূর্বশত্রুতার জেরে অনেক নিরীহ ব্যক্তিকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীও মামলার আসামিদের চেনেন না।
কয়েকজন আসামি সম্পর্কে বাদীর কাছে জানতে চাইলে তারা সরাসরি এদেরকে চিনেনা বলে জানান।তাহলে কেন তাদেরকে আসামী করা হয়েছে জানতে চাইলে, রাজনৈতিক নেতারা এসব নাম দিয়েছে বলে সরাসরি স্বীকার করে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর দুটি মামলা হয়েছে, আমরা কিছু এজাহার ভুক্ত আসামিদের আটক করেছি।অনেকে পলাতক রয়েছে। নিরহ মানুষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,যদি এসব লোকের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকে বা প্রতিহিংসার কারণে আসামি হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদ দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার ( আনোয়ারা সার্কেল ) সোহানুর রহমান সোহানব বলেন, ‘মামলার সঠিক তদন্তপূর্বক যেসব এজাহারভুক্ত আসামির বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামির বাইরে তদন্তে প্রাপ্ত অনেক সন্দিগ্ধ আসামি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনছি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই তাঁদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া কিংবা অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে