মাসুদ পারভেজ
কার্যকর আজ থেকেই, নগরের যানজট নিরসনে তুলে ধরলেন আরো কিছু পরিকল্পনা । জহুর হকার্স মার্কেট ভেঙে বহুতল মার্কেট করা হবে
যানজট নিরসনে প্রধান সড়কসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে চলতে পারবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা। এক্ষেত্রে কোন কোন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে টাইগারপাস চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘নগরের যানজট নিরসনকল্পে মতবিনিময় সভা’য় ব্যটারিচালিত রিকশার বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় কোন কোন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না তা ঘোষণা দেন মেয়র। এরপর তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার শৃঙ্খলার জন্য রোডগুলো আমরা বলে দিয়েছি, তা আপনারা মেইনটেইন করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটালে দায়–দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। এ কারণে প্রশাসনিক জায়গা থেকে আপনাদের গাড়ির কোনো সমস্যা হয় তখন আমাদের উপর দোষ চাপাতে পারবেন না। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি কোন কোন রোডে চালাতে পারবেন। এসময় ব্যাটারি রিকশার অবৈধ চার্জিং স্টেশন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দেন।
মেয়র বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে র্যাম্প নির্মাণ করছে তার বিরোধিতা করেন। মেয়র মনে করেন ‘জনগণের স্বার্থের বাইরে গিয়ে পেনিনসুলা হোটেলের মালিককে খুশি করতে এ র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে’।
এছাড়া ডা. শাহাদাত নগরের যানজট নিরসনে কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজের পাশে বাস স্টেশন চালু, নগরের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী ছাউনি ও বাস স্টপেজ নির্মাণ, কূলগাঁও বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ফুটভার ব্রিজ নির্মাণ এবং গোলচত্বর ঘিরে নিজের নানা পকিল্পনা তুলে ধরেন। এছাড়া হকার পুর্নবাসনে জহুর হকার্স মার্কেট ভেঙে বহুতল মার্কেট করার পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
সভায় সিএমপি এবং বিআরটিএ’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (উত্তর) জয়নুল আবেদীন, ডিসি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. মাসুদ আলমসহ বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
যেসব সড়কে চলতে পারবে না ব্যাটারি রিকশা : ডা. শাহাদাত বলেন, সিএমপি’র ট্রাফিক উত্তর জোন–এর আওতাভুক্ত কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট হয়ে দামপাড়া পুনাক ক্রসিং পর্যন্ত এবং ষোলশহর ২নং গেইট থেকে প্রবর্তক মোড় ও গোলপাহাড় হয়ে জিইসি পর্যন্ত এবং জাকির হোসেন রোডে ওয়ারলেস মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না।
ট্রাফিক দক্ষিণ জোন–এর আওতাভুক্ত সড়কের তালিকা তুলে ধরে মেয়র বলেন, দামপাড়া পুনাক থেকে টাইগারপাস হয়ে নিউ মার্কেট কোতোয়ালী, নিউ মার্কেট থেকে জুবিলি রোড কাজীর দেউরি, আলমাস হয়ে ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার থেকে জামাল খান হয়ে আন্দরকিল্লা মোড়, গনি বেকারি মোড় হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, কেয়ারি মার্কেট, গুলজার মোড়, অলি খাঁ মোড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল জরুরি বিভাগের গেইট পর্যন্ত মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না।
ট্রাফিক পশ্চিম জোন–এর আওতাভুক্ত রাস্তার তালিকা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, দেওয়ানহাট হতে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, এঙেস রোড, ডি টি রোড প্রধান সড়কে চলতে পারবে না। বন্দর জোন–এর রাস্তার তালিকা তুলে ধরে মেয়র বলেন, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, কর্ণফুলী টানেল গোল চত্বর, আকমল আলী রোডের মাথা এবং লিংক রোডের প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না।
ডা. শাহাদাত বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে যানজট কমানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর জন্য যে সব অবৈধ চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো বন্ধে প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমি আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন তাদেরকে বলেছি। তবে আমি বিআরটিএসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলব।
এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার রাস্তা নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, কাল (আজ) থেকে কার্যকর হবে।
বাওয়া স্কুলের সামনে র্যাম্প নিয়ে আপত্তি : বাওয়া স্কুলের সামনে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, এখানে র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না। এটা আমি মেয়র হিসেবে স্ট্রংলি বলতে চাই। আমি সিডিএকে বলেছি, সিডিএর চেয়ারম্যানকে এবং এখানে সিটি নিয়ে যারা পরিকল্পনা করে তাদেরও বলেছি। নগরপরিকল্পনা নিয়ে যারা ভাবেন তারাও এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে কোনো একজন ব্যক্তির লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না।
মেয়র বলেন, ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তার হোটেলের ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য একটা র্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তার হোটেলের যাত্রীগুলো খুব দ্রুত এয়ারপোর্ট চলে যাওয়ার জন্য। আমি সেদিন উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সামনে স্পষ্ট বলেছি। যারা সাংবাদিক ছিল তারা হয়তো বা আমার কথা শুনেছেন। আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার সামনে স্পষ্ট বলেছি, পেনিনসুলার যে মালিক তাকে খুশি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। এখানে জনগণের স্বার্থের জন্য নয়, বরং জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পেনিনসুলা হোটেলটি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন। সম্প্রতি ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ ‘জিইসি র্যাম্প’ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
যাজট নিরসনে আরো যেসব পরিকল্পনা : মেয়র বলেন, নগরীর যানবাহনের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হলে যত্রতত্র বাসসহ যেকোন যানবাহন দাঁড়াতে পারবে না। যাত্রী ছাউনি, বাস স্টপেজ যেখানে থাকবে সেখানে দাঁড়াতে হবে। এই জায়গায় আমাদেরকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়ানোর কারণে কেবল যে যানজট বাড়ছে,।