মো: ফরিদ উদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার বান্দরবান
লামায় ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে শতকোটি টাকার মালিক
বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: ইদ্রিস কোম্পানী। থাকেন পুরাতন বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নে, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বনে যান লামা উপজেলার সরই ইউপি চেয়ারম্যান। এরপর থেকে একক নিয়ন্ত্রণে নেন পুরা ইউনিয়ন। এই চেয়ারম্যানের পদটি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে গত পনের বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান। গাছ ব্যবসা দিয়ে শুরু, এরপর কি করেননি তিনি। নানা ধরনের প্রতারণা, ইউনিয়নের বিভিন্ন খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, একাধিক ব্যাক্তি মালিকানার জমি দখলসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। হয়েছেন অবৈধ ইটভাটার মালিক, ইউনিয়নের অবাধে পাহাড়কাটার জন্য কিনেছেন এস্কেভেটর, মাটি বহন করার জন্য নিয়েছেন একাধিক ড্রাম ট্রাক। ইউনিয়নের হাসপাতাল পাড়া এলাকায় বিশাল পাহাড় কেটে নির্মাণ করেছেন কোটি টাকার আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সরই বাজারে ৪তলা মার্কেট যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাক। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল পাড়া এলাকায় ১০ একর রাবার প্লট যার আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা। একই এলাকায় পাহাড় কেটে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করছে বিলাশ বহুল আলিশান ডুপ্লেক্স রাজপ্রসাদ। আন্দারী এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের আনুমানিক ৩০ লাখ মূল্যের ৫ একর রাবার প্লট। অপরদিকে লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে তার নিজ বাড়িতে গাছের ডিপোসহ বিশাল করাত কল যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। একই এলাকায় গড়ে তোলেছেন MRB নামে অবৈধ ইটভাটা যার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা। একই ইউনিয়নের লাগড়ীপাড়া এলাকায় ১ম শ্রেণীর ৮০০ শতক জমি যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকা। লামা ও লোহাগাড়া এলাকার পাহাড়ের মাটি কাটার জন্য কিনেছেন আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ২টি এস্কেভেটর। পাহাড়ের মাটি ও অবৈধ বালু বহন করার জন্য কিনেছেন আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি ড্রাম ট্রাক। এতো সম্পদের পরও সরকারকে আয়কর ফাঁকি দিতে আয়কর রিটার্ন ফাইলে নীট সম্পদের বিবরনী দিয়েছেন শুধ মাত্র ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ ইটভাটা নির্মান, আবার সেই ইটভাটার চুল্লির জন্য বনজ সম্পদ ধংস করে লাকড়ী, ইট তৈরি করতে পাহাড়ের মাটি ও বালু যোগান দেন তিনি। টংগঝিরি এলাকার ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের উচ্ছেদ করে ভূমি দখল, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপোট দেখিয়ে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে তার ইউনিয়নে টংগঝিরি এলাকায় প্রায় অর্ধশত ত্রিপুরা পরিবারকে উচ্ছেদ করে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে শত শত একর জায়গা জোর পূর্বক দখল দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট সরকারের পতনের পর বেনজীর আহমেদ পালিযে যাওয়ায় তার আশা জলে ভেসে যায়। ফলে সেই এলাকার জায়গাটি আর বেনজীর আহমেদকে দখল দিতে পারে নাই তিনি।
জায়গা দখল নিয়ে গণেশ ত্রিপুরা, চন্দ্র মনি ত্রিপুরা, সত্য মনি ত্রিপুরা সহ স্থানীয়রা জানান, ইদ্রিস চেয়ারম্যান ও তার সহযোগি স্থানীয় কিছু নেতাসহ বেশ কয়েকজনের প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকির কারণে যেকোন মুহূর্তে পাড়া ছাড়তে হবে এমন আতংকে দিনরাত পার করছেন অবহেলিত ত্রিপুরা পরিবারগুলো। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এমনকি মানববন্ধন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। দাবী এখনই সরকার যেন আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার। আমরা এখানে প্রায় অর্ধশত পরিবার ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসাবাস করছি। কয়েকদিন আমাদের উচ্ছেদ করতে চেষ্ঠা করেছিল বেনজীর আহমেদ। এখন আবার নতুন করে আওয়ামী লীগ নেতা তার কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করতে চাইছে। আমরা এটি নিয়ে কয়েকবার মানববন্ধনও করেছি। তাদের মতে প্রশাসন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তারা আবার সক্রিয় ও একতাবদ্ধ হচ্ছে। এখনো সময় আছে, নয়তো তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এসময় তারা ইদ্রিস চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেবার দাবি জানান। প্রয়োজনে তারা ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করারও হুশিয়ারী দেন।
উপজেলায় সরই ইউনিয়নের স্থানীয় মোস্তাক আহমেদ, মো: ইসমাইল, আবু সাঈদসহ অনেকই বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাস্তবায়ত কোন প্রকল্পের কাজ আমাদের ইউনিয়নে হয় নাই। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তো দূরের কথা আন্দারী কালাম বক্স পাড়া এবতেদায়ি মাদ্রাসার মাঠ সংস্কারের জন্য ৬.৬ মেট্রিক টন যে চাল বরাদ্দ হয়েছিল। তা না করে চেয়ারম্যান মাদ্রাসায় ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলো সেই টাকা এখনো দে নাই। সব টাকা চেয়ারম্যান লুটপাট করে নান্দনিক বাড়ি নির্মাণ করছে।
তবে এই বিষয়ে সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: ইদ্রিস কোম্পানি বলেন, আমি কোন প্রকল্প থেকে এক টাকাও অনিয়ম করি নাই। যা টাকা পেয়েছি তা কাজ করেছি। অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকায় নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি অনেক আগে থেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত।