লায়ন চৌধুরী আনোয়ারুল আজিম
সচল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে অঞ্চল ভিত্তিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য জমি খুঁজতে নির্বাচন কমিশন থেকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর ওয়্যারহাউজের জায়গার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সমপ্রতি ইসির অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় ওয়্যারহাউজ নির্মাণের আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম সংশ্ল্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করেন। ইসি সচিব শফিউল আজিম ওই সভার পর ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক, সাধারণ সেবা শাখার উপসচিব ও উপ প্রধানকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহৃত ৫১০ সেট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জেলার ছয়টি উপজেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্কুল–কলেজ গুলোতে পড়ে আছে। ওয়্যারহাউজ না থাকায় ইভিএমগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমগুলো উপজেলার বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও অফিসার্স ক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে রাখা হয়েছে। ইভিএমগুলো যথাযথ সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে রাখতে গিয়ে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, ইভিএম সংরক্ষণে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা হবে। এই ব্যাপারে জায়গা দেখতে বলা হয়েছে। আমার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা না গেলে সচল মেশিনগুলোও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় ৫১০ সেট ইভিএম উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে, উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে এবং স্কুল–কলেজে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে মীরসরাই উপজেলায় রয়েছে ১৭০ সেট, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় রয়েছে ১৩০ সেট, ফটিকছড়ি উপজেলায় রয়েছে ৩০ সেট, চন্দনাইশে রয়েছে ২০ সেট, পটিয়া উপজেলায় রয়েছে ২০ সেট এবং আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে ১৪০ সেট।
এভাবে সংরক্ষণের অভাবে ইভিএমগুলো পড়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই অবস্থায় ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ তৈরি করার প্রতি জোর দেয় নির্বাচন কমিশন।
এই ব্যাপারে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার চট্টগ্রাম মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আমাদের জেলা অফিসে ইভিএম নেই। উপজেলায় রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও আমাদের অফিসে রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম–ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে ইভিএমগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিতে ওয়্যারহাউজ তৈরির পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যে সমপ্রতি ঢাকায় একটি ওয়্যার হাউজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ অপর ৯টি অঞ্চলেও উন্নতমানের এই ভোট যন্ত্রগুলোর সুরক্ষায় ইসি উদ্যোগ নিয়েছে।
এক্ষেত্রে ইভিএম প্রকল্প পরিচালক ও সব আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি সচিবালয় থেকে।