এম কে আলম চৌধুরী কক্সবাজার
আবারও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে টেকনাফের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায়।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দে টেকনাফ পৌর, হ্নীলা, সদর ও সাবরাং এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
সীমান্ত বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে আজ বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত মংডু শহর এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। একই সময়ে মিয়ানমারের মংডু এলাকায় রাতদিন যুদ্ধবিমানের চক্কর দিতে দেখেছেন টেকনাফ পৌর, হ্নীলা, সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা আবু তালেব বলছেন, রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধ পুনরায় তুমুল হওয়ায় বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।এসব শব্দ মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের। মংডু টাউনশিপের আশপাশের উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সুধাপাড়া, নাপিতের ডেইল, নয়াপাড়া, সিকদারপাড়া ও হারিপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হচ্ছে।
সাবরাং আছারবনিয়ার মোহাম্মদ সাবের বলেন, এমন বিকট বিস্ফোরণের শব্দ কখনো শোনা যায়নি। ফজরের নামাজের সময় বোমার শব্দে থর থর করে কেঁপে উঠে পুরো মসজিদ। এই পর্যন্ত এমন গোলাগুলির শব্দ আর কোন সময় যায়নি।
শাহপরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনাম উল্লাহ বলেন, নয় মাস ধরে এলাকার মানুষের চোখে ঘুম নেই। দিনের বেলা তো যেমন-তেমন, রাত হলেই বাড়ে দুশ্চিন্তা।মিয়ানমারের সমস্যার কারণে এপারের বাসিন্দারা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। যুদ্ধ বিমানগুলো আমার বাড়ির উপর দিয়ে গিয়ে বোমা নিক্ষেপ করছে এমন মনে হয়। তারা আমাদের আকাশ সীমানা অতিক্রম করছে কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
হ্নীলার ৯নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন,নাফনদীর জালিয়ার দিয়া ও লাল দিয়া নামে এ দুটি চরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী দুটি গোষ্ঠী অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি মংডু শহর থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। সবমিলিয়ে সীমান্তের মানুষগুলো ভালো নেই। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সাবরাং এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। লোকজন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে খুবই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসকারী আবদুল আমিন জানান ,টানা নয় মাসের বেশি সময় রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি।ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এরফলে সীমান্তে বসবাসকারি বাংলাদেশিদের নানান ধরনের সমস্যায় ভোগছেন। এ সংঘাতের জেরে কেউ যাতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে করতে না পারে সে লক্ষ্যে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।