মাসুদ পারভেজ
চট্টগ্রাম: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক খেলা চলছে বাংলাদেশে। খেলাধূলা যারা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না।
এই বিএনপি সেই বিএনপি নয়। এই বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে, এর শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে।
এই বিএনপিকে টলানোর সাধ্য কারও নেই। বিএনপির কয়েকটা সিদ্ধান্ত তো আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন।
সুতরাং এরকম সিদ্ধান্ত দিলে এ অবস্থায় যেতে হবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে নগরের ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা, পেশাজীবী সমাবেশ ও নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপিকে জোর করে ক্ষমতার বাইরে রাখার তাদের যে ভাবনা ছিল, ওই ওয়ান-ইলেভেনের বিরাজনীতিকরণ, আবার নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা। ক্ষমতার স্বাদ তো কেউ কেউ পেয়েছেন, মনে রাখছেন এ ক্ষমতা ধরে রাখলে মন্দ কী! কিন্তু এ স্বাদ পাবার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার জন্য ১৬ বছর যুদ্ধ করেছে। বিএনপিকে ভাঙার সব ধরনের চেষ্টা হয়েছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা সব হয়েছে, কিছু বাকি নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার চেষ্টার মধ্যেও দেশনেত্রী টলেননি, তারেক রহমান টলেননি, বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ টলেনি। সবার অবস্থান শক্ত।
তিনি বলেন, সাতই নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতার যে ভাবনা, যে চিন্তা, যে আকাঙ্খা, সেটা স্বাধীনতার পরে সেদিন পূর্ণ হয়নি। বরং স্বাধীনতার পরে সেটাকে ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসন, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, কালো আইন, এসবের মাধ্যমে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের লড়াই ছিল, সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্খা, মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধের যে স্যাক্রিফাইস, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আবার নতুনভাবে পেয়েছে, নতুনভাবে গ্রহণ করেছে এবং উজ্জীবীত হয়েছে সাতই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে।
অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যমত্যে কোনো সংস্কার করলে আপত্তি নেই জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, যেখানে ঐক্যমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে যাবে, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রস্তাব পাস করলে কোনো অসুবিধা নেই, এটাই তো নিয়ম, তারপর সংসদে সেটা পাস হবে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করলে, সংসদে তো সেটা আবার রেটিফাই করতে হবে। সুতরাং যেটুকু করতে পারেন, আমাদের আপত্তি নেই। এর মধ্যে ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যদি দশটা সংস্কার করতে পারেন, তাহলে আমরা রাজি আছি। আর বাকিগুলো জনগণের কাছে যাবে, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিমের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সংবর্ধিত অতিথি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, ড্যাব চমেক শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, সিএমইউজে সভাপতি সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দীন আহমেদ মানিক, ড্যাব মহানগর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্বাস উদ্দীন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি এম এ সাফা চৌধুরী, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এছাড়া ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ও জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর উপর নির্মিত ডকুমেন্টরি শর্টফিল্ম প্রদর্শনী করা হয়।