পরিদর্শন শেষে বললেন মেয়র শাহাদাত অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার নির্মাণের ঘোষণা
মাসুদ পারভেজ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এখানে একজন প্যাথলজিস্ট থাকবেন। ডেঙ্গু নির্ণয়ে যে টেস্ট তা এখানে নিশ্চিত করা হবে। যে কোনো রোগী এখানে এসে অত্যন্ত সাশ্রয়ী রেটে, বাইরে থেকে ৩০–৪০ শতাংশ কমে এখানে সেবাটা পাবেন।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মেয়র। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে কিডনি রোগীদের ডাইয়ালাইসিস এর সুবিধার্থে অতি দ্রুত চসিকের উদ্যোগে নগরে একটি অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার নির্মাণেরও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এখন কিডনি রোগী বেশি। ডাইয়ালাইসিস করতে তাদের কষ্ট হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এত বেশি রোগী, তারা ফি নেয় কিন্তু ঠিক মত ডাইয়ালাইসিস করতে পারে না। তিনি সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার করার পরিকল্পনা আছে, যেখানে স্বল্প খরচে সেবা পাবেন। এর বাইরে বার্ন, ট্রমা, নিউরোসার্জারি হাসপাতালসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে।
মেমন হাসপাতাল নিয়ে যা বললেন : ডা. শাহাদাত বলেন, সবার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসাপতালে সমস্ত ফ্যাসিলিটিস নিশ্চিতে আমি বদ্ধ পরিকর। এখানে যে মেশিনগুলোর সংকট রয়েছে সেগুলো প্রোভাইড করব। চিকিৎসার ব্যাপারে আমি কোনো ধরনের কমপ্রোমাইজ করতে চাই না। আমি চাই জনগণ সাশ্রয়ী রেটে যেন তাদের সেবা পাই।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মেমন হাসপাতালে কিছু যন্ত্রপাতি কম আছে। কিন্তু সেগুলো আহামরী নয়। আমার নিজেরও হাসপাতাল আছে। আমি নিজেই অনেক সময় মেশিনারিজ কিনি এবং এগুলোর মূল্য জানি। যতটুকু সম্ভব দরদাম করে ভাল মানের মেশিন কিনব। কাজেই দরদাম করে কিনলে এক কোটি টাকার বেশি লাগবে না। অতিদ্রুত সেগুলো কেনার ব্যবস্থা করছি। ১০০ বেডের হাসপাতাল হিসেবে এখানে চিকিৎসক কম আছে মনে হচ্ছে। এ সময় সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা নিশ্চিতের পরও মেমন হাসপাতালকে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, একসময় নারী ও নবজাতক শিশুদের সেবায় মেমন হাসপাতালের চট্টগ্রামে আলাদা সুনাম ছিল। বন্দরটিলা হাসপাতাল, মোস্তফা হাকিম হাসপাতালসহ কর্পোরেশনের বেশ কিছু ভালো হাসপাতাল রয়েছে এগুলো সংস্কার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা হবে। নিজের চিকিৎসা জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে বলেন, আমি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলাম। রুগ্ন এই হাসপাতালটিকে দায়িত্ব ছাড়ার সময় একটি ছয় তলা হাসপাতাল ভবনসহ সাড়ে তিন কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রেখে এসেছি। কখনো কোন ডক্টর কোনো নার্স বা স্টাফ বলতে পারেনি যে তাদের বেতন বকেয়া ছিল। ইনশাল্লাহ আমার আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন করব।
মেয়র বলেন, আমি আজকে মেমন হাসপাতাল ঘুরে দেখেছি। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। গত ছয় মাসে এখানে কোনো রোগী মাতৃজনিত কারণে এবং কোনো বাচ্চা জন্মের পর মারা যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে জনগণ তাদের সেবা পাচ্ছে কীনা সেটা আমি প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে দেখব। সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্ন বা অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে হোক। আমি মানুষের সেবা করার জন্য মেয়র হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আগের কাউন্সিলররা পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য ৪০–৫০ জন করে যে লোকবল নিয়োগ করেছে তারা ঠিকভাবে কাজ করছে কীনা সেটা আমি স্বচক্ষে দেখব। গিয়ে যদি তাদের না পাই ব্যবস্থা নেব। আমি চাই তারা ফাঁকিবাজি না করুক।
অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্পোরেশনে জনবল কাঠামোর চেয়ে লোকবল বেশি আছে। অনেক লোককে অমুক–তমুকের আত্মীয় হিসেবে নেয়া হয়েছে। স্থায়ীকরণের বিষয়টি চিন্তা করে দেখব।
এ সময় উপস্থিাত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, ডা. মুনিরুল ইসলাম রুবেল, ডা. হোসনে আরা বেগম, ডা. শাহনাজ আক্তার, ডা. মো. রেজাউল করিম, ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. বাবলী মল্লিক, ডা. পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, ডা. ঢালিয়া ভট্টাচার্য্য, ডা. সামন্ত মহুরী, ডা. নিবেদিতা পাল, ডা. পলাশ দাশ, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন।